বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ০৫:১৭ পিএম
ঢাকার ধামরাইয়ে আলাদীনস পার্ক নামে একটি বিনোদন কেন্দ্রে ঢাকার মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে, বুধবার রাতে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার আলাদীনস পার্কে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাতে কলেজের শিক্ষক মো. আব্দুল হাই বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলা করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন—মো. রাকিব (২৩), অন্তর (১৮), মো. সুমন (৩১), মো. রানা (২৩)। তারা সবাই ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের সীতি এলাকার বাসিন্দা।
এ ছাড়া মামলার আসামিরা হলেন—আলাদীনস পার্কের মালিকের ছেলে রিফাত মাহমুদ (৩৫), পার্কের ব্যবস্থাপক নকিবুল রনি (৪৮), মালিক আলাউদ্দিন (৫৭), পার্কে কর্মরত আবুল কালাম আজাদ (৩৫)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষক মো. আব্দুল হাই বলেন, আলাদীনস পার্কের লোকজন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তারা কাঠের লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হন।
তিনি বলেন, আহতদের ধামরাই ও সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এইচএসসি পরীক্ষার্থী জাকারিয়া সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেলে এখনো ভর্তি রয়েছে। সে হাতে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। একই শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাতকে আজকে এনাম মেডিকেল থেকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। সে মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাত পেয়েছেন।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতেই একজন শিক্ষক ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ধামরাইয়ের উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সিতী পাল্লী এলাকায় আলাদীনস পার্কে কয়েক শিক্ষার্থীর মুঠোফোন হারানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে পার্কের লোকজন ও ঢাকার মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষক, আলাদীনস পার্ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৬৫০ জন ১২টি বাসে করে বিনোদন কেন্দ্রটিতে আসেন। দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মোবাইল ফোনসহ মালামাল লকারে রেখে ওয়াটার পার্কে নামেন। তবে পানি থেকে উঠে কয়েকজন শিক্ষার্থী লকার খোলা ও সেখানে মোবাইল ফোন খুঁজে পাননি। শিক্ষার্থীরা এজন্য পার্ক কর্মচারীদের দায়ী করলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগ্বিবতণ্ডা হয়।
বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় মীমাংসা হয়, তবে মোবাইল ফোন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে বিকেল ৫টার দিকে বিনোদন কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন না পাওয়া পর্যন্ত বিনোদন কেন্দ্র ছেড়ে যেতে আপত্তি জানান। একপর্যায়ে তারা বিনোদন কেন্দ্রের স্থাপনায় ভাঙচুর করেন।
এ সময় বিনোদন কেন্দ্রের কর্মচারীরা তাদের ওপর চড়াও হন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পার্ক কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের পরিবহনের অন্তত ৮টি বাসে ভাঙচুর করে। সংঘর্ষে অন্তত ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী ও ১০-১৫ জন পার্ক কর্মচারী রক্তাক্ত জখমসহ আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষক নাসির আফজাল বলেন, সকাল ১০টার দিকে আমরা ৬৫০ জন এসেছিলাম ১২টি বাসে করে। বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাটা ঘটে। ছোট থেকে শুরু। কয়েকটি মোবাইল খোয়া যায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি। তখন বাচ্চারা বলেছে, মোবাইল ছাড়া বাসায় গেলে সমস্যা, যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তখন আমরা বললাম, তারা যদি না দেয় আমরা দেখবো। এরিমধ্যে তারা (শিক্ষার্থীরা) ভাঙচুর করেছে। এটি দেখে হয়তো আশপাশের লোকজন ডেকেছে। তারাও ভাঙচুর করেছে। এতে আহত ৬ জনকে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। অনেকে সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সবমিলিয়ে অন্তত ২০-২৫ জন আহত হয়েছে। আমরা মামলা করবো। বাকিরা থানায় গিয়েছে। এটার ক্ষতিপূরণের বিষয় রয়েছে।
এ বিষয়ে আলাদীনস পার্কের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নকিবুল হাসান রনি বলেন, স্কুল থেকে সকালে পিকনিকে এসেছিল। ঘটনা দুইবার ঘটেছে, দুপুরে একবার, বিকেলে একবার। দুপুরে মীমাংসা হওয়ার পরে বিকেলে যাওয়ার সময় সব কিছু ভাঙচুর করে গেছে। মোবাইল হারানোর মতো কিছুই হয়নি। এইখানে লকার রাখছিল, লকার থেকে বের হওয়ার সময়, হতো বা আর একটা লকারে চাবি দিয়ে খুলেছে, সেখানে ১০০টি লকার আছে। এটা নিয়ে আমাদের স্টাফকে প্রথমে মারধর করছে, পরে ওনাদের শিক্ষকদের ডেকে এনে বিষয়টা মীমাংসা করেছি।
শিক্ষকরা বলছে, যে ছেলেকে মারছে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে গেছে। পরে বের হওয়ার সময় ওরা এমন ভাঙচুর করছে ও স্টাফদের মারধর করছে। মারধরে স্টাফরা নিরুপায় হয়ে যায়। তখন এলাকার মানুষজনও ছিল, তারাও এসেছে, পরে ধাওয়া পাল্টা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ১৫-১৬ জন আহত হয়েছে, এর মধ্যে সবাই রক্তাক্ত জখম। আহত সবাই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে।
আরটিভি/এএএ