images

দেশজুড়ে

পেঁয়াজের সাদা ফুলে ‘কালো সোনা’ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা 

শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ০২:২০ পিএম

images

পেঁয়াজের সাদা ফুল শুকিয়ে বের হয় কালো বীজ। যার বাজারদর আকাশ ছোঁয়া। তাই একে বলা হয়, ‘কালো সোনা’। পেঁয়াজের এই বীজ উৎপাদন করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন রাজবাড়ীর অনেক চাষি। তাই এবারও লাভের আশায় বুক বাঁধছেন তারা। রাজবাড়ীতে এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজ বীজের। 

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া বেশ অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে কালো সোনার সাদা ফুল। আর এই সাদা ফুলের কদমেই লুকিয়ে রয়েছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ।

কৃষি কর্মকর্তাদের আশা, চলতি মৌসুমে জেলায় উৎপাদন হবে ১০০ কোটি টাকার বীজ। নয়নাভিরাম এসব ফুলের মাঝেই লুকিয়ে আছে কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজের বীজ। লাভজনক এই বীজের পরাগায়নে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজবাড়ীর চাষিরা। গুণ আর মানে উৎকৃষ্ট হওয়ায় এর চাহিদাও আছে বেশ। তাই তো লাভের আশায় বীজ ঘরে তোলার অপেক্ষায় আছেন তারা।

রাজবাড়ীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এই পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন দিনদিন বাড়ছে। আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থাকি। তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিই। যাতে তারা ভালো বীজ উৎপাদন করতে পারে। পোকামাকড়, রোগবালাই দূর হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারাদেশের পেঁয়াজ বীজের চাহিদার ৩০ শতাংশ আসে রাজবাড়ী থেকে। তবে এ মৌসুমে পেঁয়াজসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজীখেতে কৃষকরা মাত্রাতিরিক্ত ক্রটি নাশক ব্যবহারের কারণে ফসলের পরাগায়নে বন্ধু মৌমাছি বংশ বৃদ্ধি করতে না পারায় প্রকৃতিতে মৌমাছি কমে গেছে। এতে পরাগায়নের সংকটে ফসলের উৎপাদনও কমে গেছে। যার প্রভাব পরেছে পেঁয়াজের ফলনের ওপর।

কিন্তু কৃষি বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছেন বর্তমানে প্রচণ্ড গরমে ক্ষেতে মৌমাছির সংকট দেখা দিয়েছে। আর মৌমাছির না থাকায় পেঁয়াজের ফুলের পরাগায়ন কম হওয়ায় বীজ উৎপাদনে ঘাটতির শঙ্কা দেখা দেবে বলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন।

এ ছাড়াও কৃষকরা পেঁয়াজের কদম ধরে ধরে হাত দিয়েও পরাগায়ন করে দিচ্ছেন। ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে প্রতি একরে ৪০০ কেজির মতো ফলনের আশা করা যাচ্ছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়স্থানে রাজবাড়ী জেলার অবস্থান। দেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদন হয় রাজবাড়ীতে। এ জেলায় পেঁয়াজ আবাদের পাশাপাশি কদম পেঁয়াজ বীজের আবাদও হয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে।

পেঁয়াজ আবাদে যে পরিমাণ বীজ প্রয়োজন তার অধিকাংশ বীজ জেলাতেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। উৎপাদিত এসব বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। বেশি দাম হওয়ায় পেঁয়াজের এ বীজকে চাষি ও কৃষি অধিদপ্তর ‘কালো সোনা’ বলে ডাকেন।

চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া ভালো হলে খরচ বাদে এই পেয়াজের বীজ চাষে লাভ হয় দ্বিগুণেরও বেশি, তাই এগুলো ‘কালো সোনা’ নামে খ্যাতি পেয়েছে। তাই কৃষকরা কালো সোনা’ চাষে স্বপ্ন দেখছেন। এ বীজ আবাদ করে চাষিরা অন্যান্য ফসলের চাইতে অধিক পরিমাণে লাভবান হয়ে থাকেন।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলা, পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালী ও গোয়ালন্দে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে জেলা সদর, পাংশা ও কালুখালী উপজেলাতে কদমের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। চলতি বছর রাজবাড়ী সদরে ৬২ হেক্টর, পাংশা উপজেলায় ৭৪ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ৬২ হেক্টর, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের কদমের আবাদ হয়েছে। 

এদিকে সরেজমিনে পাংশা উপজেলার যশাই গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে পেঁয়াজ বীজের সাদা ফুল। শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, পেঁয়াজ বীজের গাছে শক্তি যোগানোর জন্য অনেকে কীটনাশক স্প্রে করছেন। মৌমাছি সংকট থাকায় অনেক কৃষক আবার হাত দিয়েই পেঁয়াজ ফুলের মধু ফেলার কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত রোপণ করা পেঁয়াজ বীজ গাছের ফলন ভালো হওয়ায় লাভের স্বপ্ন বুনছেন তারা।

পেঁয়াজের কদম প্রথমে সাদা দেখতে হলেও পরে কালো রংয়ে ধারণ করেন। প্রতি কেজি বীজ চলতি বছর প্রায় সোনার দামে আট হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে বলে কৃষকেরা পেঁয়াজের বীজ কে আদর করে ‘কালোসোনা’ বলে ডাকে।

জেলায় চলতি মৌসুমে ২২৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের কদমের চাষাবাদ হয়েছে। আর ২২৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন হবে ১৪০ টন। এ পরিমাণ পেঁয়াজের বীজের বাজার মূল্য ১০০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। শুধু জেলা নয়, দেশজুড়েও পেঁয়াজ চাষিদের স্বপ্ন পূরণ করে রাজবাড়ীর পিয়াজ বীজ খ্যাত কালো সোনা।  

সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কালো সোনার সাদা ফুল। আর কিছুদিন পরই চাষিরা বীজ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করবেন। অনেকেই পরিচর্যা শেষে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঘরে তোলার।রাজবাড়ীতে তাহেরপুরী,কিং ও বারী-৪ জাতের পিয়াজ বীজ বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। 

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক শহীদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ২২৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে। রাজবাড়ীতে মূলত তাহেরপুরী, কিং ব্যান্ড ও বারী-৪ জাতের পেঁয়াজ দানা আবাদ করা হয়।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এবার জেলায় দেড় হাজার কৃষক পেয়াজ বীজ আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ফলনও ভালো হবে। এতে করে লাভবান হবেন চাষিরা।

আরটিভি/এএএ/এস