সোমবার, ১৯ মে ২০২৫ , ০৭:১৯ পিএম
ভারত সরকার হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে ছয়টি ধরণের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা রপ্তানি বাণিজ্য রক্ষায় দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, সুতা ও সুতার উপজাত, এবং আসবাবপত্র। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও কাঠের আসবাব ব্যতীত বাকি সব পণ্যই নিয়মিতভাবে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হতো।
সোমবার (১৯ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দরে শুধুমাত্র বরফায়ীত মাছ, ভোজ্যতেল ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি হয়। ৮টি ট্রাকে ৩৭ মেট্রিক টন মাছ, ৭টি ট্রাকে ৮৬ মেট্রিক টন তেল এবং একটি ট্রাকে ১৯ মেট্রিক টন পাটজাত দ্রব্য আগরতলায় পাঠানো হয়। যেখানে পূর্বে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি রপ্তানিমুখী ট্রাক যেতো, সেখানে এখন মাত্র ১৬টি ট্রাক রপ্তানিতে অংশ নিয়েছে।
বন্দরে দেখা যায়, স্থল শুল্ক স্টেশন, সিএন্ডএফ এজেন্ট, পণ্য পরিবহনে যুক্ত শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ দুশ্চিন্তায় ব্যবসা চালু রাখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন,একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রায় সব পণ্যই বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। প্রাণ, আরএফএল, হাশিম ফুডসহ অনেক বড় কোম্পানির পণ্য এতে অন্তর্ভুক্ত। এতে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীরই ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।
মৎস্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, আগে ট্রানশিপমেন্ট বন্ধ করা হয়েছিল। এখন আবার নতুন করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নিছার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বাকি কয়েকটি পণ্য ঠিকভাবে চালু না থাকলে আমাদের রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে কাস্টমস, সিএন্ডএফ, শ্রমিক সবাই বিপদে পড়বে।
আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৪২৮ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (চলতি) প্রথমার্ধে রপ্তানি হয়েছে ৪৫৩ কোটি টাকার পণ্য। একই সময়ে আমদানি ছিল তুলনামূলক কম, চলতি অর্থবছরে মাত্র ১০৬ টন পণ্য আমদানি হয়েছে।
স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি গাড়ি রপ্তানিতে অংশ নিতো। নিষেধাজ্ঞার পর এখন শুধু মাছ, সিমেন্ট ও শুটকি মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দেশের অন্যতম বৃহৎ এবং শতভাগ রপ্তানিমুখী এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে তা সরবরাহ করা হয় দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে। ভারতের হঠাৎ এ সিদ্ধান্তে দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরটিভি/এমকে-টি