মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫ , ০৭:০৫ এএম
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুলনায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গিয়ে আহত এক যুবলীগ নেতা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে অনুদান পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি গত বুধবার (১৪ মে) খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আহত জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ‘সি ক্যাটাগরিতে’ এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেছেন তিনি। তার চেক প্রাপ্তির ছবি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্র-জনতা।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, আহত জুলাই যোদ্ধা সি ক্যাটাগরিতে খুলনায় ৬৩ জনের নামে চেক এসেছে। তাদের মধ্যে ৫০ জন এক লাখ টাকার চেক নিয়েছেন। গত ১৪ মে খুলনার জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হাত থেকে চেক গ্রহণ করেন মিনারুল। অভিযোগের বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসন রোববার (১৮ মে) রাতে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি মিনারুল ইসলাম খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে খুলনার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় কার্যালয় থেকে পালাতে গিয়ে আহত হন মিনারুল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেরখাদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এফ এম মফিজুর রহমান বলেন, তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মিনারুল ইসলাম। ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় সে মধুপুরের বাড়িতেই ছিল। ৪ আগস্ট খুলনায় দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশে যোগ দিতে যায়। সেখানে পালাতে গিয়ে টিনের চালে ঝাপ দিলে পায়ে কী সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছিলাম।
গত বছরের ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছিলেন খুলনা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল। আত্মগোপনে থাকা জামালের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট মিনারুল আমাদের সঙ্গেই ছিল। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে সে কার্যালয় থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে মিনারুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘জরুরি মিটিংয়ে আছি, ১০ মিনিট পরে ফোন ব্যাক করছি।’ এরপর অসংখ্যবার তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি। একপর্যায়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন।
এ ব্যাপারে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডল জানান, উপজেলা পর্যায়ে আবেদন করলে পুলিশ, জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধি, হাসপাতালসহ বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। পরে জেলা কমিটির সভায় আরেক দফা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মিনারুল নামের ব্যক্তি সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রণালয় থেকে তার আবেদন যাচাই-বাছাই করে গেজেট প্রকাশ করে চেক খুলনায় পাঠিয়েছে। এ জন্য তার আবেদনের বিষয়ে খুলনায় কোনো তথ্য নেই। কেউ যদি তার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে সেটি যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তখন গেজেট থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মিনারুল ইসলামের নামটি মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা। মূল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া, চেকটা আমরা তাকে (মিনারুল) দিয়েছি। কিন্তু চেকটা ক্যাশ হয়নি। টাকাটা তিনি তুলতে পারেননি। ক্যাশ হওয়ার আগেই আমরা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি এবং চিঠি দিয়েছি। ব্যাংক থেকেও বলা হয়েছে, প্রয়োজনে তারা চেকটা ক্যানসেল করে দেবে।
আরটিভি/কেএইচ