শরীফ চৌধুরী
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫ , ০৭:০২ পিএম
রাত পোহালে পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা থাকার কথা থাকলেও নেই চাঁদপুর জেলার কামার শিল্পে কোনো ব্যস্ততা। সারাবছর অলস সময় পার করলেও কোরবানির মৌসুমে বেশ ব্যস্ততা বেড়ে যেতো এই কামার পাড়ায়। দিনরাত সমান তালে লোহার টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রতিটি কামার ঘর। অনেকেই আসতো কোরবানির জন্য অন্যতম অনুষঙ্গ ডাসা, ছুরি, বটি, চাপাতি, হাঁসুয়াসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি বা কিনতে।
আবার কেউবা আসতো এসব সরঞ্জাম শান দিতে। কিন্তু এখন আর নেই তেমন কামারপাড়ায় টুং টাং শব্দ। কারণ সময়ের পরিক্রমায় অনলাইন ও আধুনিক মেশিনে তৈরি সরঞ্জামে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় কামারশিল্পে পড়েছে ভাটা। বিদেশি চকচকে পণ্যের ভিড়ে ক্রমশ জৌলুস হারাচ্ছে দেশিয় কামার শিল্প। তবে কোরবানির ঈদ ঘিরে কিছুদিনের জন্য হলেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে চাঁদপুরের কামারপাড়া।
নেড়েচেড়ে উস্কে দেয়া হচ্ছে কয়লার আগুন। লাল লোহার ওপর একের পর এক হাতুড়ির ঘা। আর তাতেই তৈরি হচ্ছে কোরবানির প্রয়োজনীয় দা, ছুরি আর চাপাতি। যদিও এক সময় কোরবানির ঈদের সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই হাতুড়ির টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকতো চাঁদপুরের কামারপাড়া গুলো। আধুনিক যন্ত্রপাতির দখলে বাজার হওয়ায় এখন আর কদর নেই কামার শিল্পীদের। সারাবছর যেমন তেমন, এই ঈদেও তাদের হাতে তেমন কাজ নেই। দিন দিন তাদের ব্যবসার পরিসরটা ছোট হয়ে আসছে।
কামারের দোকানগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়। বছরে একবারই ভালো ব্যবসার আশায় বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা কামার শিল্পীরা ক্রেতাদের আসার প্রহর গুনছেন। দোকানে সব রকম আইটেম থাকলেও বিক্রি কম। আশানুরূপ বিক্রি নেই বলে মন ভালো নেই কামার শিল্পীদের। বিভিন্ন এলাকার কামার পাড়া ঘুরে কামার শিল্পীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
কয়েকজন ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, বটি ধারাতে এসেছি। অনলাইনে ছুরি, চাপাতি কেনা হয়েছে। এখন এখানে আর আসতে হয় না
অনলাইনেই সব পাওয়া যায়। পুরনো দা, বটি ছিল সেগুলো ধার করাতে এসেছি।
আবার কিছু ক্রেতা বলেন, বাইরের জিনিসের চেয়ে আমাদের দেশের জিনিস অনেক ভালো মানের। তবে অনলাইনেই সব পাওয়া যায়।
চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন কামার দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদের আর মাত্র বাকী ২ দিন বাকী থাকলেও কামার দোকানগুলোতে নেই ক্রেতাদের ভিড়। বছরে একবারই ভালো ব্যবসার আশায় বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা কামার শিল্পীরা ক্রেতাদের আসার প্রহর গুনছেন। আশানুরূপ বিক্রি নেই বলে মন ভালো নেই কামার শিল্পীদের।
চাঁদপুর শহরের তালতলা এলাকার কর্মকার স্টোরের সত্ত্বাধিকারী দীপক কর্মকার ও সুইটি কর্মকার জানায়, আধুনিক যন্ত্রপাতির দখলে বাজার হওয়ায় এখন আর কদর নেই কামার শিল্পীদের। সারাবছর যেমন তেমন, এই ঈদেও তাদের হাতে তেমন কাজ নেই। দিন দিন তাদের ব্যবসার পরিসরটা ছোট হয়ে আসছে। দোকানে সব রকম আইটেম থাকলেও বিক্রি কম।
বংশ পরস্পরা ধরে রাখতেই এখনো এ পেশায় অনেকে জড়িয়ে আছে। তবে অনলাইন ও বাজারের আধুনিক পণ্য সামগ্রীর প্রসারে দিন দিন কমছে এই পেশার মানুষ। পেশায় ভাটা পড়ায় দিন দিন কামার শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় পাওয়া পেশা ছেড়ে খুঁজে নিচ্ছেন অন্য পেশা। এতে এই শিল্পটি হারানোর মুখে পড়েছে।
আরটিভি/এএএ