বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫ , ০৫:৪৬ পিএম
মাসে একবার কাজের ডাক পাই তাও আবার দশ দিনের বেশি কাজ করার সুযোগ পাই না। দিন শ্যাষে মজুরি যা পাই তাতে সংসার চালানো যায় না। আগে ম্যালা কাজ পাইতাম মজুরিও পাইতাম বেশি। অহন মজুরি কম আবার জিনিসপত্রের দাম বেশি, আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলি বলছিলেন তামা-কাঁসা শিল্পের ভরণ শিল্পী বা ভরণ কারিগর লাল মিয়া।
ঢাকার ধামরাই উপজেলায় এখনও টিকে আছে তামা-কাঁসা শিল্প। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে তামা-কাঁসা শিল্প। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প। ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী তামা-কাঁসা শিল্প বেঁচে আছে ঢাকার ধামরাইয়ে। শিল্প বেঁচে থাকলেও শিল্পীদের জীবন আছে খুব কষ্টে। চাহিদা কম থাকায় দিনে দিনে এ শিল্পের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আগে কাঁসার জিনিসপত্র তৈরির কারখানা ছিল তবে এখন একমাত্র ঢাকার ধামরাই পৌরসভায় রয়েছে মাত্র পাঁচটি কারখানা। এক সময় কাঁসা পেটানোর শব্দে দিনে-রাতে মুখর থাকতো ঢাকার ধামরাইয়ের রথখোলা, পাঠানটোলা, যাত্রাবাড়ী, ভাড়ারিয়া, যাদবপুরসহ ধামরাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চল। ধামরাই উপজেলায় তামা ও কাসার তৈরির প্রায় তিন শতাধিক কারখানা ছিল।
প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের দাম কম ও সহজলভ্য হওয়ায় এখন এসব পণ্যের ব্যবহার কমে গেছে। এর সঙ্গে তামা কাসার তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের দামও বেড়ে যাওয়ায় এ পেশায় সংশ্লিষ্টতা কমে যাচ্ছে। বৈদেশিক রপ্তানি এবং সখের বসে বাড়িতে সাজিয়ে রাখতে কাঁসার জিনিসপত্রের প্রতি কাস্টমারের চাহিদা রয়েছে বলে জানান, এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।
ধামরাই গোপনগর এলাকার ভরণ কারখানায় গিয়ে দেখা যায় মহাদেব নামে এক ভরণ শিল্পী আপন মনে কাজ করছেন। এ শিল্প সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ খুবই কম, অন্য কাজ আর পারি না তাই এই কাজ করি। জীবন প্রায় শ্যাষের দিকে, সারা জীবন ধরেই এই কাজ করতাছি। দিন শ্যাষে মজুরি পাই ২৫০-৩০০ টাকা এই টাকা দিয়া অহন আর সংসার চলে না। মজুরি পাই গন্ডা হিসাবে, এক গন্ডা মাল ফিনিশিং দিলে ২০ টাকা পাই। অহন চাহিদা কম তাই কাম কম।
কারখানার মালিক ক্ষিতিশ ঘোষ বলেন, আগে ধামরাইয়ে প্রায় ৩০০ কারখানা ছিলো এখন আছে হাতে গুনা দুই তিনটা। কাঁচামালের ঘাটতি আর গ্যাস সমস্যার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস পাইনা কিন্তু মাস শেষে গ্যাসের বিল ঠিকই দিতে হয়। ভরণের মাল ভরতে একজন কারিগরকে ৭০০ টাকা দিতে হয় তাই আমি নিজেই মাল ভরণের কাজ করি। এখন বদনা বানাই না শুধু ঘটি আর পালি বানাই। মালের চাহিদা ঢাকাতে নাই, রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, নওগাঁর দিকে মাল সরবরাহ করি।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, ধামরাইয়ের নামের সঙ্গে তামা-কাঁসা শিল্পের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি দিনকে দিন এ শিল্পের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। আমরা যদি এটার শৈল্পিক মূল্য বাড়াতে পারি তাহলে দেশের অভ্যন্তরে এ শিল্পের বাজার সম্প্রসারণ সম্ভব। সরকারের পক্ষ হতে এ শিল্পের রক্ষার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার এবং সমাজসেবা অধিদপ্তর হতে কারিগরদের স্বাবলম্বী করতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার সুযোগ আছে।
আরটিভি/এএএ