images

জাতীয় / অপরাধ / দেশজুড়ে

ঈদকে ঘিরে ঢাকার বিপজ্জনক ৫০ স্পটে ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজরা বেপরোয়া

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল ২০২২ , ০৯:৫৬ পিএম

images

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীজুড়ে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঢাকার অলিগলিতে ওঁৎ পেতে থেকে পথচারী, রিকশারোহী, যানজট আটকে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে তারা। অপরদিকে ভয় দেখিয়ে লেগুনা, বাস, পণ্য পরিবহনের গাড়ি ও দোকান থেকে চাঁদা আদায়ে সক্রিয় রয়েছে একাধিক চক্র।

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ঢাকার অন্তত ৫০টি বিপজ্জনক স্পট খুঁজে পেয়েছে তারা। ঈদকে ঘিরে চাঁদাবাজির পেছনে যারা ইন্ধন যোগাচ্ছেন তাদের নাম-তালিকা তৈরির পাশাপাশি তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

র‌্যাবের তৎপরতার অংশ হিসেবে রাজধানীর রমনা, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও ওয়ারীসহ ১৫টি স্থানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় ছিনতাইয়ে জড়িত ২০ জনকে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। এরা বিভিন্ন স্থানে সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনাস্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করছে।

কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে তারা জীবননাশের হুমকি দেয়। র‌্যাব অভিযোগ পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-৩ এর কয়েকটি দল একযোগে অভিযান চালিয়ে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায় করা নগদ এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৩০ টাকা, ৬০টি মোবাইল ও ৪৫টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাই-চাঁদাবাজদের যারা ইন্ধন জোগান তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীতে প্রায় ৫০টি স্পটে ছিনতাই-চাঁদাবাজি হচ্ছে। এসব স্পটে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা শহরের প্রবেশ পথেও গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হয়েছে।

গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন- আওয়াল (৪৫), আতিক (৩৫), আলাউদ্দিন (৪৫), ইসমাইল (৫৪), জুয়েল (৪৩), দুলাল (৪৫), বদির উদ্দিন বাবু (৫০), বাবুল (৫২), বাবুল হাওলাদার (৪৯), মোস্তফা হাওলাদার (৫০), সাহেব আলী (৫৪), তানভির (৪০), জালাল হোসেন (৩০), নিয়ামুল হোসেন (২৯), ময়নুল হোসেন (৪৫), মিন্টু খান (২৫), মেনু মিয়া (৩৮), রনি (৩১), রানা (২৪), শরীফ সরকার (৩৫), মহসীন (২৫), রনজিৎ দাস (৪৮), রাসেল শিকদার (২১), হারেজ (৪৩), বাদশা (২৯), আল আমীন সর্দার (২০), শহীদ (২৭), রাজু (৩৫), রফিক (২৫), রোমান (৪২), আকবর (২০), ইমন (১৯), রাব্বি (১৯), হৃদয় (১৯), মো. হোসেন (১৯), আল আমিন (২২), ইসমাইল হোসেন (২২), নাইমুল ইসলাম মিশু (২৫), নুরুল হক (২৫), রতন (২২), রাব্বি (১৯), শফিকুল ইসলাম (২৪), সাগর হোসেন শামীম (২০), উজ্জল মিয়া (২০), আক্কাছ (৫০), ইউছুফ (৩২), জাহিদ (৪৪), মুন্সি মুছা আহমেদ (৫২), রবিন মিয়া (৩২), সাগর (২৭), সুজন (৪৫), সোহাগ মৃধা (৩২) ও সোহেল সরকার (৩১)।

র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রত্যেক দোকানির কাছ থেকে তারা দৈনিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছিল।

তিনি বলেন, ওয়ারী থানাধীন কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজি শুরু হয় রাত ১২টার পর, যা চলে ভোর পর্যন্ত। পোল্ট্রি মুরগি বহনকারী কোনো গাড়ি এ বাজারে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির ধরন ও মুরগির পরিমাণ দেখে নির্ধারণ করা হতো চাঁদার পরিমাণ। যা জোরপূর্বক আদায় করা হয়। চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানি, মালামাল আনলোড ও বিক্রিতে বাধা দেওয়া হয়। প্রতি রাতে এখান থেকে আদায় করা হতো কয়েক লাখ টাকা।

রমনা থানার শান্তিনগরে মূলত রাস্তার ধারে ভাসমান দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। সকাল-বিকেলে দুই শিফটে আদায় করা হয় চাঁদা। এ কাজে ৪-৫ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। প্রতিদিন এখান থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, লেগুনাস্ট্যান্ডে তাদের কথা মতো কেউ চাঁদার টাকা না দিলে কোনো রুটে লেগুনা চলতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়। তখন লেগুনা চালকরা পেটের দায়ে বিনা প্রতিবাদে চাঁদা পরিশোধ করে। এসব চাঁদাবাজকে আইনের আওতায় আনার ফলে নিরীহ দোকানদার ও লেগুনা চালকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মালিবাগ রেল গেট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালভার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়েছে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।