images

খেলা / সাক্ষাৎকার

অবশ্যই ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার ফাইনাল

শুক্রবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ , ০৮:৫৯ এএম

images

‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসরের মাঠের লড়াই জমে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার বিশ্বকাপে এখন শিরোপার লড়াইয়ে টিকে রয়েছে আট দল। মরুর বুকে বিশ্বকাপের লড়াইয়ে টিকে থাকা দলগুলোর খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আরটিভির সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক।

প্রশ্ন : কেমন আছেন?

শফিকুল ইসলাম মানিক : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

প্রশ্ন : বিশ্বকাপে হট ফেভারিটদের একের পর বিদায়ের কারণ কি? এবার কি নতুন কেউ চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে ?

মানিক : পুরোনো যারা হট ফেভারিট, তারা কিন্তু এখনও আউট হয়নি। আউট হয়েছে জার্মানি, বেলজিয়াম। তো এদের থেকে (কোয়ার্টারে কোয়ালিফাই) কাউকে না কাউকে বিদায় নিতে হতো। আমার চোখে প্রথম যে ছয়টা দল কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছে, তারাই কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনালের দাবিদার। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে মরক্কো এখানে নতুন একটি দল। নতুন এক ড্রাইমেনশন, তারা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে যাচ্ছে এবং সেটা করেছেও। গ্রুপ পর্বে করেছে, এখন শেষ ষোলোতে এসেও তাই করল। মরক্কো এখন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার পথে আছে। আমি বলব না করেছে, কিন্তু পথে আছে। এর ভিতরে জাপান-কোরিয়া শেষ ষোলোয় এসেছিল, এরা এশিয়ার একটা গৌরব। মরক্কো ছাড়া নতুন আর কারও পথ তো উন্মোচিত নয়। আর যদি আমরা ইউরোপের পরাশক্তি হিসেবে দেখি, তাহলে সেটা পর্তুগাল। কারণ, পর্তুগাল বিশ্বকাপের পরাশক্তি না, ইউরোপের পরাশক্তি। তাদের কিছু সম্ভাবনা হয়তো দেখতে পাচ্ছি। তাই নতুন আমরা বলতে পারি মরক্কোকে, আর বিশ্বআসরে পর্তুগালকে। পর্তুগাল অনেক আগে একবার সেমিফাইনাল খেলেছিল, এরপর আর কিছু করতে পারেনি। 

প্রশ্ন : আর্জেন্টিনার বর্তমান দলের সম্ভাবনা কেমন? 

মানিক : প্রথম ম্যাচ ছাড়া বাকি ম্যাচগুলো ভালো খেলেছে। প্রথম ম্যাচও ভালো খেলেছে। প্রথম ম্যাচে তারা গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। তাদের ফুটবলারদের বন্ডিং খুব শক্ত। দেশের প্রতি তাদের ডেডিকেশন, তারা কিন্তু এখনও ফিল করছে। একটা ক্ষুধার্ত মনোভাব আছে তাদের মধ্যে। জয়ের ক্ষুধা, এইটুকু আমি দেখতে পাই। এটা না থাকলে কিন্তু একটা ভালো দল যত ভালোই খেলুক, যেমন স্পেন যথেষ্ট ভালো খেলেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ক্ষুধার্ত মনোভাব ছিল না। যে কারণে তারা হেরেছে। আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের ক্ষুধার্ত মনোভাবও আছে। যার কারণে তারা অনেক দূর সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং মেসি হলো তাদের আইকন। সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, আর্জেন্টিনার এবারের দলটি পরিপূর্ণ, তাদের কমিটমেন্ট ও ডেডিকেশনের জন্য। একটা পরিপূর্ণ দল মাঠের ভিতরে শক্তিশালী দল।

প্রশ্ন : কোনো দুর্বলতা আছে এই দলের? 

মানিক : আর্জেন্টিনার অনেক জায়গায় দুর্বলতা আছে। অনেক জায়গায়  কোয়ালিটি সম্পন্ন প্লেয়ার নেই। কিন্তু খেলোয়াড়দের ভিতরে বন্ডিংয়ে সেটা কাভার হয়ে যায়।

প্রশ্ন : গত আসরের তুলনায় আর্জেন্টিনা কি তাহলে মেসি নির্ভর নয়? 

মানিক : না, মেসি নির্ভর না ওইটা বলা যাবে না। মেসি নির্ভর, অন্য ফুটবলাররা মেসিকে কেন্দ্র করেই ভালো ফুটবল খেলে।

প্রশ্ন : নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্স কীভাবে দেখছেন? আর্জেন্টিনা কীভাবে পরিকল্পনা সাজাবে বলে মনে করেন?

মানিক : বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস নতুন কেউ না। বিশ্বকাপে তারা পরিচিত মুখ। তাদের তো সেরা ডিফেন্স রয়েছে। ভালো করছে। কিন্তু স্ট্রাইকাররা তরুণ, তারাও ভালো করছে। আর আর্জেন্টিনা ফরমেশন খুব বেশি কাজে দেয় বলে আমার মনে হয় না। নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্স লাইন শক্ত হলেও মেসি, ডি মারিয়াদের পক্ষে ডিফেন্স লাইন ব্রেক করা সম্ভব। অসম্ভব বলতে কিছুই নেই। তাদের পক্ষে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া সম্ভব।

প্রশ্ন : শেষ ম্যাচের মতো পর্তুগাল আবারও এমন পরীক্ষা চালাতে পারে কি না? 

মানিক : একটা হয়তো কাজে দিয়েছে। কোচের সঙ্গে একটা সমস্যা ছিল। এটা মীমাংসাও হয়ে গেছে। মনের দূরত্ব হয়তো থাকতে পারে। রোনালদো সমর্থক ও দলের অন্য ফুটবলারদের কাছে একটা অনুপ্রেরণা। তাই সে মাঠে থাকা, মাঠে থেকে সাপোর্ট করা, এটা একটা বিরাট উৎসাহের ব্যাপার। সেই উৎসাহও কিন্তু কাজে লাগছে। তাই একদিন হয়তো ক্লিক করছে, সেকেন্ড দিন যদি না করে তখন কি রোনালদো অভাব ফিল করবে না? 

প্রশ্ন : তাহলে কোচের নেওয়া সিদ্ধান্ত কীভাবে দেখছেন?

মানিক : কোচ তার সেরা একাদশ নিয়েই মাঠে নামতে চাইবে। কোচের যদি মনে হয় তার নিয়ম অনুযায়ী রোনালদো কাজে আসছে না, সেক্ষেত্রে পরিবর্তন করেই খেলাবে। দলের স্বার্থে যেকোনো কিছুই কোচ করতে পারেন এবং কোচরা তাই করেন। 

প্রশ্ন : ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের লড়াইটা কেমন হতে পারে? 

মানিক : এটা হাড্ডাহাডি লড়াই। অবশ্যই দুই পরাশক্তির খেলা। আমার মনে হয় খুব টাইট ম্যাচ হবে। ফ্রান্স গতবারের চ্যাম্পিয়ন আর ইংল্যান্ড তো ক্ষুধার্ত। অনেক বছর হয় ইংল্যান্ডের শিরোপা নাই। তাই এই দলটা থেকে ভালো কিছুই থাকবে এবং ইউরোপের খেলা যখন হয় তখন খুব টাইট ম্যাচ হয়। তাদের ম্যাচে বলেকয়ে এতো গোল হয় না। তাই ইংল্যান্ড ফ্রান্সের মধ্যে এতো পার্থক্য হওয়ার কোনো চান্স নেই। শেষ পর্যন্ত যারা সুযোগ কাজে লাগাবে, কোচের কৌশল কাজে লাগাবে তারাই এগিয়ে থাকবে। এমনকি এটা টাইব্রেকারে গেলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। নির্দ্বিধায় কাউকেই ফেভারিট বলা যাচ্ছে না। 

প্রশ্ন : কোনো দুই দলকে ফাইনালে এগিয়ে রাখবেন? 

মানিক : অবশ্যই ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার ফাইনাল।