সোমবার, ০৭ আগস্ট ২০২৩ , ০৯:৩৮ পিএম
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০১৩ সালে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ছাত্রলীগের নেতা আরিফ রায়হান দীপকে হত্যা করে ধর্মান্ধ এক জঙ্গি। এ ঘটনার ১০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আজও বিচার মেলেনি ভুক্তভোগী পরিবারের।
সোমবার (৭ আগস্ট) তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ। এ সময় আর্থিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাবার পাশাপাশি দীপের হত্যাকারীদের বিচার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তার বন্ধু ও স্বজনরা।
বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও বুয়েট ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন আরিফ রায়হান দীপ। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে তাকে মাথায় ও পিঠে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় আরিফের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা ১৭ এপ্রিল বুয়েটের মেজবাহউদ্দীন নামের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেন।
এদিকে হাসপাতালে ৮৪ দিন কোমায় থাকার পরে ২০১৩ সালের ২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন দীপ। তার মৃত্যুর ১০ বছরের বেশি সময়ে পেরিয়ে গেলেও এখনও বিচার পাননি দীপের পরিবার ও বন্ধুরা।
সোমবার বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদারের হাত থেকে আর্থিক সহায়তার চেক গ্রহণের পর কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দীপের বাবা শেখ আলী আজম। কিন্তু সেই সঙ্গে তার কণ্ঠে ছিলো ছেলে হত্যার বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ। তিনি বলেন, বুয়েটের পক্ষ থেকে যেই সহায়তা প্রদান করা হয়েছে সে জন্য ধন্যবাদ। বুয়েটে এলে দীপের ঘ্রাণ পাই এখনো। নিম্ন আদালতে দীপ হত্যার যেই বিচার হয়েছে, এরপর আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবো। দীপকে কবর দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমার দীপ জেগে আছে ছাত্রলীগের আরও হাজার সন্তানের বুকে।
এদিকে এ হত্যার বিচার চেয়েছেন দীপের বন্ধুরাও। একইসঙ্গে তারা মৌলবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধেরও দাবি জানান। চেক প্রদানের সময় বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, আমরা চাই না এভাবে বুয়েটের কোন শিক্ষার্থীর প্রাণ যাক। বুয়েটের প্রতিটি হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন জোরদার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা যেন আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন, সে বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কড়াকড়ি করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্যই সব সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয়েছে।
আর্থিক সহায়তা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর সমন্বয়ক ও তিতাস বোর্ডের পরিচালক তন্ময় আহমেদ। দীপ হত্যার পর একই বছর তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি গেলে শিবির কর্মীরা তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে মৃত মনে করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। এখনো তার শরীরে ১৩০টি সেলাই চিহ্ন নিয়ে ঘুরছেন তিনি। তৎকালীন সময় প্রকাশিত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দীপ ও তন্ময় আহমেদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে বুয়েট থেকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করায় তাদের ওপর এই হামলা চালানো হয়।
দীপের বন্ধু ও বুয়েট ছাত্র তন্ময় আহমেদ বলেন, বুয়েট কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের শিক্ষকরা দীপের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে এসেছেন। আমরা আশা করি এই ক্যাম্পাসে কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি আর এভাবে মাথা চাড়া নিয়ে উঠবে না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু কমিশনের প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার, পরমাণু বিজ্ঞানী তানভীর হাসান তালাশ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র সম্মানী সহকারী সাধারণ সম্পাদক রনক আহসান, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবু সাইদ কনক ও খন্দকার জামি উস সানী এবং বুয়েটের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।