আসিফ আলম
শনিবার, ১০ মে ২০২৫ , ০৭:২০ পিএম
নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে খলনায়ক হিসেবে জনপ্রিয় হন। সাধারণত খল অভিনেতাদের বাঁকা চোখে দেখা হলেও তার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। বর্তমানে তিনি ঢালিউডের প্রথম সারির খল অভিনেতা। বলছি মিশা সওদাগরের কথা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বড় পর্দায় দর্শক মাতাচ্ছেন এই অভিনেতা। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৯ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করে রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
এদিকে, গেল ঈদুল ফিতরে ‘বরবাদ’ সিনেমায় নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে খলনায়ক মিশা সওদাগর পর্দায় হাজির হয়েছেন বাবার চরিত্রে। যারা ছবিটি দেখেছেন, একবাক্যে আরিয়ান মির্জা (শাকিব খান) ও আদিব মির্জার (মিশা সওদাগর) পর্দায় উপস্থাপন উপভোগ করেছেন। বাবার চরিত্রে মিশার অভিনয় প্রশংসিত হলেও শুরুতে এই চরিত্র নিয়ে চিন্তিত ছিলেন মিশা। তবে শেষ পর্যন্ত তার মুখে এখন বিজয়ের হাসি। মুক্তি পাওয়া নতুন ছবি ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আরটিভির সঙ্গে কথা হয় মিশা সওদাগরের।
আরটিভি: ঈদে আপনার অভিনীত ‘বরবাদ’ মুক্তি পেয়েছে। অভিনয়ের প্রশংসা করছে, কেমন উপভোগ করছেন বিষয়টি?
মিশা সওদাগর: ‘বরবাদ’ নিয়ে সবার এতো প্রশংসা আমি আমার পুরো ক্যারিয়ারে পাইনি। আমাকে যত নির্মাতা, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কল দিয়ে প্রশংসা করেছে তা আমি আমার অভিনয় জীবনে আগে কখনও পাইনি। কষ্ট যখন সার্থক হয় তখন এ সাফল্যের মাঝে চোখে আনন্দ অশ্রু পড়ে। ছবিতে আমার চরিত্রটি আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি যদি কোনোভাবে এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হতাম তাহলে আমার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হতো। শাকিবের সঙ্গে ভাই, প্রতিদ্বন্দ্বী, চাচা সব ক্যারেক্টার করেছি। এইবার বাবা চরিত্র সো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো এটি। আসলে মন থেকে কিছু সাধনা করলে সাফল্য আসবেই। যাক উপর ওয়ালার কাছে কৃতজ্ঞ, আমার নির্মাতা ও দর্শকদের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
আরটিভি: সিনেমায় আপনার অভিনয় নিয়ে পরিবারের ভাষ্য জানতে চাই।
মিশা সওদাগর: আমি দেশে থাকলেও কোনো ভালো সিনেমা মুক্তি পেলে পরিবার নিয়ে দেখি। এবারও দেশের বাইরে থাকলেও সেখানে পরিবার নিয়েই ‘বরবাদ’ দেখেছি। পরিবারের সবাই সিনেমাটির প্রশংসা করেছে। কেননা ছবিটি বর্তমান প্রজন্মের ছবি। বলা চলে আন্তর্জাতিক মানেড় সিনেমা হয়েছে ‘বরবাদ’। দেশকে পরিচত করতে হলে কমার্শিয়াল ছবি করতে হবে। ইন্ডিয়ার মদিকে অনেকেই চিনে না কিন্তু শাহরুখ, সালমান, আমির খানকে সবাই চিনে তাদের কমার্শিয়াল সিনেমার জন্য। সুতরাং দেশকে আন্তর্জতিক পর্যায় তুলে ধরতে কমার্শিয়াল ছবির বিকল্প নেই।
আরটিভি: সম্প্রতি শিল্পীদের নামে গণহারে মামলা হচ্ছে, এতে অন্য শিল্পী থেকে শুরু করে সরকারও বিব্রত৷ একজন সিনিয়র শিল্পী হিসেবে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
মিশা সওদাগর: আপনারা ভালো করেই জানেন আমি ওইভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। কারণ রাজনীতি করতে অনেক যোগ্যতা লাগে, যেটি আমার নেই। তবে হ্যাঁ একসময় আমি জাজাসে ছিলাম কিন্তু পরে সময় দিতে পারব না বলে সরে দাঁড়িয়েছি। এরপর সেভাবে আর কখনোই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে মামলার বিষয়টি নিয়ে আমি সাধারণ মানুষ হিসেবে বলতে চাই যে অন্যায় করবে অবশ্যই তাকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হউক, তবে হ্যাঁ কোনো নিরপরাধ মানুষ যেনো হয়রানির শিকার না হয়।
আরটিভি: আপনার নতুন ছবি ‘ইনসাফ’ নিয়ে জানতে চাই।
মিশা সওদাগর: ফুল কমার্শিয়াল সিনেমা হতে যাচ্ছে ‘ইনসাফ’। পাশাপাশি ছবিতে রয়েছে অনেক দক্ষ অভিনেতারা। আশা করছি দর্শকরা হতাশ হবেননা।
আরটিভি: ‘ইনসাফ’এ মোশাররফ করিমও থাকছে। তার সঙ্গে আপনার প্রথম কাজ, কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?
মিশা সওদাগর: হ্যাঁ ‘ইনসাফ’এ মোশাররফও থাকছে। এক কথায় তিনি দুর্দান্ত অভিনেতা। আমি মনেপ্রাণে চাই তিনি নিয়মিত কার্মাশিয়াল ছবিতে কাজ করুক।
আরটিভি: ঢাকাই সিনেমার স্ট্যান্টম্যানরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। একজন সিনিয়র শিল্পী হিসেবে তাদের মূল্যায়ন নিয়ে আপনার মতামত কী?
মিশা সওদাগর: সম্প্রতি মনির স্ট্যান্টম্যান নামে একজন মারা গিয়েছে দেখেছি বিষয়টা। আমি চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি, সারারাত ঘুমাতে পারিনি। আমি নিজে স্ট্যান্ট করেছি অনেকবার। যে কারণে আমার এক দুর্ঘটনায় পায়ের লিগাম্যান্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। আমার শরীরের বেশির ভাগ অংশই ঠিক নেই। আর তাই আমি জানি এটি কত কষ্টের কাজ। আমাদের দেশে স্ট্যান্টম্যানদের পারিশ্রমিক অনেক কম। নেই কোনো ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা।
ইতোমধ্যে আমি ফাইট ডিরেক্টর আরমানের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার চাওয়া হলো এখন থেকে যারা ফাইটার আছেন বা স্ট্যান্টম্যান আছেন তাদের আগেই চুক্তি করে নিতে হবে শট দিতে গিয়ে কোন ক্ষতি তাহলে সেই ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এবং সবার ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে। এই মনিরই যেনো শেষ দুর্ঘটনা হয়।
আরটিভি/এএ-টি