images

আন্তর্জাতিক / ধর্ম

অস্তিত্বের বার্তা নিয়ে হাজার বছরের পুরনো পথে হজযাত্রা

শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ , ০৫:০৯ পিএম

images

চলছে পবিত্র হজের মৌসুম। সারা পৃথিবী থেকে হজযাত্রীরা মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ হজযাত্রীরই ভরসা বিমান, অনেকে চড়ছেন জাহাজেও। তবে, ব্যতিক্রম কিছু মানুষও আছেন, যা হজযাত্রার জন্য বেছে নিচ্ছেন কষ্টসাধ্য মরুর পথ। হাজার বছরের পুরনো এ পথে যাত্রা করে স্পেন থেকে মক্কা পৌঁছেছেন এমনই তিন মুসল্লি। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, বিশ্ববাসীকে বার্তা দিতে চান, স্প্যানিশ মুসলমানদের অস্তিত্ব এখনও টিকে আছে।   

স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হুয়েলভা শহর থেকে তিনজনের এ কাফেলাটি মক্কার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে আরও ছয় মাস আগে। ঘোড়ায় চড়ে সাত হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছেছেন তারা। যাত্রী দলটি দক্ষিণ ইউরোপ হয়ে প্রথমে তুরস্কে পৌঁছে। তারপর সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে সৌদি আরবে পা রাখেন তারা।

এখন থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে এই উচ্চাভিলাষী অভিযাত্রার চিন্তা করেছিলেন ড. আবদুল্লাহ হার্নান্দেজ। তখন তিনি স্পেনের ভূগোল ও ইতিহাসের শিক্ষক হওয়ার জন্য লেখাপড়া করছিলেন।

যদিও তিনি তার দেশের ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় মুখস্থ করেছিলেন, তবুও তাকে বিশেষভাবে আলোড়িত করেছিল আল আন্দালুজ। আইবেরীয় উপদ্বীপের মুসলিম রাজ্য, বিশেষত অষ্টম শতাব্দীর হজযাত্রার ইতিহাস হৃদয় স্পর্শ করেছিল তার। মুসলিম ইতিহাস ও সংস্কৃতি তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে তিনি নিজের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন—একদিন তিনি মুসলিম হবেন এবং পূর্বপুরুষদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে হজ করবেন।

দলের আরেকজন সদস্য আবদুল কাদের হারকাসসি বলেন, যাত্রাপথের প্রতিটি দিন ছিল একেকটি অর্জন। এত কঠিন ও দুঃসাহসী যাত্রার পরও আমরা আমাদের অর্জনের জন্য আনন্দিত। প্রতি রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথচলার পর আমরা রাত যাপনের উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতাম। অবশেষে আমরা গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ! 

আবদুল কাদেরের জন্ম মুসলিম পরিবারেই। তার দাদি উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মরক্কোয় অবস্থানকালে তার দাদাকে বিয়ে করার আগে মুসলিম হন।

মরক্কো-আলজেরিয়ার সীমান্ত বন্ধ থাকায় এবং লিবিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করায় এই তিন যাত্রীর পক্ষে উত্তর আফ্রিকা অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি, যা ছিল আন্দুলুসীয় হজযাত্রীদের প্রকৃত হজপথ। কয়েক বছরের প্রস্তুতি এবং ছয় মাসের দীর্ঘ সফরের মাধ্যমে তারা বার্তা দিতে চান যে স্প্যানিশ মুসলমানদের অস্তিত্ব এখনো টিকে আছে।

আবদুল কাদের বলেন, গত শতাব্দীতে দীর্ঘ হজযাত্রায় ঘোড়ার ব্যবহার ছিল জনপ্রিয়। অবশ্য, কোনো কোনো হজযাত্রী মরুভূমি অতিক্রম করতে উট ব্যবহার করতেন। বর্তমান যুগে একইরকমভাবে ঘোড়ায় আরোহণ করে সাত হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করা একটি বড় সাফল্য। এই হজযাত্রার জন্য আমরা কয়েক বছর ধরে প্রত্যেক শীত ও গ্রীষ্মে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছি। আমরা স্পেনের পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটে বেড়াতাম। এমনকি পর্তুগালেও চলে যেতাম।

নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, অতীতে মানুষ যখন হজযাত্রা করত, তখন সীমানা ছিল উন্মুক্ত। হজযাত্রার মানচিত্রও ছিল। কিন্তু বর্তমানে সড়কপথের হজযাত্রীদের জন্য কোনো মানচিত্র নেই। এরপর আধুনিক আইন-কানুনের জটিলতা তো আছেই। কিন্তু আল্লাহ আমাদের যাত্রা সহজ করেছেন।

যাত্রাপথে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তিনজনের এ কাফেলাটি। বেশির ভাগ শহরেই উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন তারা। তুরস্কে তারা গভর্নর ও মন্ত্রীদের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও সাক্ষাৎ দিতে চেয়েছিলেন তাদেরকে। কিন্তু দেশব্যাপী বিক্ষোভের কারণে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়।

আবদুল কাদের আরও বলেন, বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ার জনগণ যখন উল্লাসে মেতে ছিল, তখন আমরা সিরিয়া অতিক্রম করি। তারা আমাদের দেখে আনন্দিত হয়। কারণ, স্প্যানিশ মুসলিমদের সিরীয়রা নিজেদের সন্তান মনে করে। উমাইয়া শাসনের সময় সিরীয় মুসলিমরা স্পেনে বসতি স্থাপন করেছিল। সিরিয়ার ইতিহাস, শিল্প ও সাহিত্যে বিভিন্নভাবে স্প্যানিশ মুসলমানের প্রসঙ্গ এসেছে।

আরটিভি/এসএইচএম-টি