রোববার, ১৮ মে ২০২৫ , ০৬:২১ পিএম
গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তীব্র আক্রমণ, বেসামরিক মানুষদের মানবিক পরিস্থিতি এবং জিম্মিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ।
শনিবার (১৭ মে) এক বিবৃতিতে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্য সব রাষ্ট্রের মতো ইসরায়েলেরও আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পদক্ষেপের ফলে বাকি জিম্মিদের জীবন নষ্ট হতে পারে, যার মধ্যে জার্মান জিম্মিরাও অন্তর্ভুক্ত, যারা প্রায় ৬০০ দিন হামাসের কারাগারে থাকার পরও তাদের জীবন রক্ষা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই আক্রমণ গাজার বাসিন্দাদের বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি এবং জিম্মিদের দুর্দশা আরও খারাপ করার ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আরও দূরবর্তী করে তুলেছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় নতুন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল শনিবার ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার এর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। অঞ্চলটির অন্য অংশীদারদের সঙ্গেও জার্মানি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বলে জানানো হয়েছে।
অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের আর যুদ্ধের মূল্য চুকানোর সুযোগ নেই।
এক বিবৃতিতে তাজানি জানিয়েছেন, আমাদের ইসরায়েলি সরকারকে বলতে হবে: যথেষ্ট হয়েছে। আমরা আর ফিলিস্তিনি জনগণকে কষ্ট পেতে দেখতে চাই না। হামলা বন্ধ করুন, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করুন, জিম্মিদের মুক্ত করুন, কিন্তু হামাসের শিকার জনগণকে শান্তিতে ছেড়ে দিন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছে, যে গত ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৪৬ জন নিহত হয়েছেন। ইউরোপে ইটালির সরকার ইসরায়েলের অন্যতম সোচ্চার সমর্থক, তবে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দেশটিতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান এখন ক্রমশ বাড়ছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ শনিবার ইসরায়েলের গাজায় গণহত্যা বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। সানচেজ বলেন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে বিশ্ব আদালতের রায়ের জন্য জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব গ্রহণের পরিকল্পনা করছে মাদ্রিদ।
বাগদাদে আরব লীগের এক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের উপর হামাসের আক্রমণের ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে গাজায় অগ্রহণযোগ্য পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে, যা মানবতার নীতি লঙ্ঘন করেছে।
সানচেজ বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যে অত্যন্ত গুরুতর মানবিক সংকট চলছে, তাতে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত, এক লাখ আহত এবং ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্পেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব জমা দেবে যাতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশাধিকারে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার বিষয়ে রায় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। গাজায় সব ধরনের সহায়তা ২ মার্চ থেকে সম্পূর্ণ অবরোধের মধ্যে রয়েছে।
শনিবার বাগদাদে ভাষণে তিনি বলেন, সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধান প্রচার করা একটি অগ্রাধিকার। এই অঞ্চলে শান্তির একমাত্র পথ হলো ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়ন। আমি আবারও অন্যান্য দেশগুলোকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাতে চাই।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা গাজা উপত্যকার অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ শেয়ার করা পোস্টে তিনি বলেছেন, গাজা থেকে আসা প্রতিদিনের খবরে হতবাক: বেসামরিক নাগরিকরা অনাহারে, হাসপাতালগুলি আবারও ধর্মঘটে আক্রান্ত। সহিংসতা বন্ধ করতে হবে!
কস্তা বলেন, ইসরায়েলি সরকারকে এখনই অবরোধ তুলে নিতে হবে এবং মানবিক সাহায্যের নিরাপদ, দ্রুত এবং নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গাজার পরিস্থিতিকে মানবিক ট্র্যাজেডি হিসেবে বর্ণনা করেছেন কস্তা।
তিনি বলেন, জনগণকে নিষ্পেষণ, অসম সামরিক শক্তির মুখোমুখি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন পদ্ধতিগত ভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র রোজালিয়া বোলেন জানিয়েছেন, গাজার মানুষের জন্য খাওয়ার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই। গাজায় ত্রাণ অবরোধ চলছে ১১ সপ্তাহ ধরে। পাশাপাশি, ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করছে।
ইরাকের বাগদাদে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও। তিনি সেখানে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে না এমন কোনও সাহায্য কার্যক্রমে জাতিসংঘ অংশগ্রহণ করবে না।
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে গুতেরেস বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত শাস্তিকে কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না। ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার দাবি ইসরায়েলের ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে তারা ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।
রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি টেলিগ্রাম পোস্টে জানিয়েছে, কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় সাইরেন বাজানোর পর, ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
তাদের দাবি, গাজায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেই এই হামলা চালাচ্ছে তারা। তবে, মার্কিন জাহাজে আক্রমণ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। এসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলও ইয়েমেনে একাধিক হামলা চালিয়েছে। ৬ মে ইয়েমেনের এক হামলার সানায় প্রধান বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শনিবার রোম থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, সেক্রেটারি রুবিও আজ রাতে (শনিবার) রোম থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তারা গাজার পরিস্থিতি এবং বাকি সকল জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য তাদের যৌথ প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন ব্রুস।
আরটিভি/এএইচ