images

দক্ষিণ আমেরিকা

তিমির ওপর জাহাজ চলাচলের প্রভাব নিয়ে ব্রাজিলে গবেষণা

শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ , ০৪:০২ পিএম

images

ব্রাজিল উপকূলের উষ্ণ জলরাশি যেন হাম্পব্যাক তিমি ও তাদের শাবকদের বসবাসের জন্য দারুণ জায়গা। কিন্তু বড় জাহাজ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিমিদের জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের ভিটোরিয়া উপকূলে সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা প্রায় প্রতিদিনই তিমি পর্যবেক্ষণ করতে বের হন। কারণ, এই জায়গায় তিমিরা তাদের বাচ্চা লালন-পালনের জন্য যায়।

সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী থিয়াগো ফেরারি বলেন, এই তিমিদের কাছ থেকে দেখা দারুণ ব্যাপার। এদের ওজন সর্বোচ্চ ৩০ টন আর দৈর্ঘ্যে এরা ১৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি ব্রাজিলের উপকূলে বাণিজ্যিক তিমি শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তারপর থেকে সেখানে তিমির সংখ্যা ৮০০ থেকে বেড়ে প্রায় ৩০,০০০-এ পৌঁছেছে। এলাকাটি যেন অনেকটা তিমি নার্সারিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তিমিরা এখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে কিছু তিমির দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, আর কিছু, মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে ডুবে যায়।

তবে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো, ভিটোরিয়া বন্দরে প্রবেশ ও বের হওয়া বিশাল জাহাজগুলো। ফেরারি বলেন, জাহাজ চলার পথে হয়ত কোনো মা তিমি তার সন্তানকে নিয়ে সাঁতার কাটতে থাকে। তখন জাহাজটি যদি সাবধান না হয় তাহলে এটি তাদের সাথে ধাক্কা খেতে পারে, সম্ভবত তিমিদের মৃত্যুও হতে পারে। জাহাজগুলি খুব শব্দও করে, যা তিমিদের যোগাযোগ ব্যাহত করে।

জীববিজ্ঞানী ব্রুনা রেজেন্ডে তিমিদের গান রেকর্ড করার জন্য পানির নিচে মাইক্রোফোন ব্যবহার করেন। রেজেন্ডে জানান, তিমিরা গান গায়, বিশেষ করে পুরুষ তিমিরা। তারা সঙ্গীকে আকর্ষণ করার জন্য এবং অন্যান্য তিমির সাথে যোগাযোগ করার জন্য গান গায়। তিমিরা সমুদ্রের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, এমনকি বৈশ্বিক জলবায়ুও নিয়ন্ত্রণ করে।

ফেরারি বলেন, তিমিরা সমুদ্রের মালী। তাদের মলমূত্র পানিকে উর্বর করে, এবং যেহেতু তারা এত বড় এবং ভারী, তাদের চলাচল সমুদ্রের স্তরগুলিকে মিশ্রিত হতে সাহায্য করে। সে কারণে পুষ্টিগুলি এমন অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয় যেখানে হয়ত খুব কম বা কোনো জৈব পদার্থ নেই। এই পুষ্টি উপাদানগুলি প্ল্যাঙ্কটন টিকিয়ে রাখে।

প্ল্যাঙ্কটন হচ্ছে এক ধরনের ক্ষুদ্র অণুজীব, যা প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড সঞ্চয় করে। প্ল্যাঙ্কটন খাওয়ার মাধ্যমে তিমিরা সমুদ্রে কার্বনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। এই সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য অপরিহার্য, এবং তিমিরা এর ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ফেরারি বলেন, তিমি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এখানে আছে, এবং রাতারাতি হারিয়ে যাবে না। কিন্তু এটি আমাদের, মানুষের বেঁচে থাকারও বিষয়। সুতরাং সাগরের এই পানিতে যা ঘটে, তার সরাসরি প্রভাব আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতের উপর পড়ে।

আরটিভি/এএইচ/এআর