images

লাইফস্টাইল

সরস্বতী পূজায় জোড়া ইলিশ বরণ ও ইলিশ মাছের বিয়ে কেন দেওয়া হয়

সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ০৪:০৭ পিএম

মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়। এ দিনে বহু পূর্ববঙ্গীয় পরিবারে জোড়া ইলিশ বরণ ও ইলিশ মাছের বিয়ের রীতি প্রচলিত। যদিও সরস্বতী পূজার সঙ্গে এ রীতির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে একই চান্দ্র তিথিতে দুই অনুষ্ঠান পালিত হয় বলে এটি এক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

জোড়া ইলিশ বরণের প্রথা
সরস্বতী পূজার দিন সকালে বাজার থেকে ইলিশ মাছ আনা হয়। মাছটি হলুদ মেখে ধান, দুর্বা, তেল, সিঁদুর ও কাঁচা হলুদ সহযোগে বাড়িতে প্রবেশ করানো হয়, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে এটি বরণ করা হয় এবং কুলার ওপর সাজিয়ে রাখা হয়। কিছু পরিবারে ইলিশের সঙ্গে আস্ত বেগুন ও লাউ ডগাও রাখা হয়।

ইলিশের বিয়ে ও প্রতীকী অর্থ
কিছু বাড়িতে জোড়া ইলিশের বদলে একটি ইলিশ ও একটি নোড়া বা শীল ব্যবহার করা হয়, যেখানে শীলটিকে পুরুষ এবং ইলিশ মাছটিকে নারী রূপে কল্পনা করা হয়। উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, ধান-দুর্বা, তেল, সিঁদুর, কাঁচা হলুদ সহযোগে এই প্রতীকী বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

মাছ কাটার বিশেষ নিয়ম
জোড়া ইলিশ বরণের সময় মুখে টাকা গুঁজে দেওয়ার প্রথাও রয়েছে, যা সাধারণত মাছ কাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট থাকে। মাছ কাটার সময় বিশেষ যত্ন নেওয়া হয় যাতে আঁশ ছড়িয়ে না যায়। কেউ কেউ কলাপাতার ওপর রেখে আঁশ ছাড়ান এবং পরে সেটি মাটিতে পুঁতে দেন।

বিশেষ রান্নার পদ্ধতি
বরণ করা ইলিশ মাছ রান্নার ক্ষেত্রেও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করা হয়। ফোড়ন ও অন্যান্য উপকরণ একসঙ্গে কড়াইতে দেওয়া হয়, তবে গুঁড়া মসলা ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত কাঁচা হলুদ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে এটি রান্না করা হয়। অনেকে রান্নায় আস্ত বেগুন বা লাউ ডগাও ব্যবহার করেন।

এ রীতির ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
অনেকে মনে করেন, পূর্ববঙ্গের মৎস্যজীবী সম্প্রদায় এক সময় বিজয়া দশমীর পর থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতেন এবং বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পূজায় আবার মাছ ধরা শুরু করতেন। এ উপলক্ষে মঙ্গলাচরণ করে ইলিশ ধরার সূচনা করা হতো।

আরেকটি মত অনুসারে, ব্রাহ্মণরা একসময় সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী ছিলেন, তবে কালক্রমে মাছকে জলতরু বা সমুদ্রের ফল হিসেবে খেতে শুরু করেন। ফলে ধীরে ধীরে ইলিশ খাওয়ার রীতি জনপ্রিয় হয়।

বর্তমানে কর্মব্যস্ততার কারণে শহরাঞ্চলে এ রীতি কিছুটা শিথিল হলেও গ্রাম ও শহরতলিতে এখনও এ ঐতিহ্য যথাযথভাবে পালিত হয়।

আরটিভি/জেএম