বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ , ০৭:৪৬ পিএম
বাংলাদেশে অনেক এলাকায় শুঁটকি মাছ খাওয়ার প্রবণতা আছে। রূপচাঁদা, লইট্টা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, গজার, পুঁটি, কাঁচকি ইত্যাদি মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এটি বেশ জনপ্রিয় পদ।কেউ ভর্তা করে, কেউ ভুনা করে, কেউ বিভিন্ন সবজির সঙ্গে ঝোল বা ভাজি করে খেয়ে থাকেন শুঁটকি মাছ। মজাদার হওয়ায় অনেকে নিয়মিত খেয়ে থাকেন। এতে অনেক পুষ্টিও রয়েছে।
শুঁটকি মাছের একটি আলাদা গন্ধ ও স্বাদ রয়েছে। অনেকেই শুঁটকি মাছ খেতে খুবই পছন্দ করলেও অনেকে আবার শুঁটকি মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না।
শুঁটকি মাছ কিছু কিছু এলাকায় একটু বেশিই জনপ্রিয়। যেমন চট্টগ্রাম। বাংলাদেশে উৎপাদিত সামুদ্রিক শুঁটকির সবচেয়ে বড় অংশ তৈরি হয় কক্সবাজারে। কক্সবাজারের নাজিরাটেক এলাকাকে দেশের শুঁটকি উৎপাদনের বৃহত্তম কেন্দ্রস্থল তথা শুঁটকির গ্রাম বলে বিবেচনা করা হয়। কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের পাশ ঘেসে প্রায় একশ একর বালুচরজুড়ে গড়ে উঠেছে নাজিরাটেকের শুঁটকি মহাল।
দেশে উৎপাদিত শুঁটকির প্রায় ৮০ শতাংশ এই নাজিরাটেকেই পাওয়া যায়। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, প্রতি মৌসুমে বিশেষ করে শীতের শুরুতে শুধুমাত্র নাজিরাটেক শুঁটকি মহলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা। কক্সবাজারের বাজার ঘাটা এলাকার বড় বাজারে রয়েছে সবচেয়ে বৃহৎ শুঁটকি মার্কেট।
পাওয়া যায় ৮০’র বেশি ধরনেরও শুঁটকি
শত বছর ধরে চলমান এই বাজারে সময়ের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে শুঁটকির ধরনও। আগে ২০-৩০ ধরনের শুঁটকির উৎপাদন হতো, সেখানে বর্তমানে পাওয়া যায় ৮০’র বেশি ধরনের শুঁটকি। প্রতিটি শুঁটকির রঙ, আকার-আকৃতিও আলাদা হয়ে থাকে। সমুদ্রে খাওয়ার উপযুক্ত যত মাছ আছে, প্রায় সব মাছের শুঁটকি এই বাজারে পাওয়া যায়। তাই অনেক বিক্রেতার মতে হিসেব করতে গেলে ১২০ এর বেশি ধরনের শুঁটকি পাওয়া যাবে এই বাজারে।
লইট্ট্যা, ছুরি, চিংড়ি, ফাইস্যা, ফাত্রা, চ্যাপা, কাচকি, মইল্যা, কোরাল, চান্দা, রুপচাঁদা, লাক্ষা ইত্যাদি হলো শুঁটকির কিছু জনপ্রিয় ধরন। খাবারকে মুখরোচক বানাতে শুঁটকির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় খাবারের হোটেলগুলোতে কয়েক পদের শুঁটকি ভর্তার আয়োজন থাকা যেন বাধ্যতামূলক। কারণ যারা খেতে আসেন তাদের বেশিরভাগের চাহিদায় থাকে শুঁটকি ভর্তার বিভিন্ন পদ।
আকার ভেদে শুঁটকির দামও হয়ে থাকে ভিন্ন। একই মাছ আকারে বড় হলে দাম হয়ে যায় দ্বিগুণ।
বর্তমানে দেশের বৃহত্তম শুঁটকির বাজার আসাদগঞ্জ। শুঁটকি ক্রয়-বিক্রয়ের লক্ষ্যে প্রতিদিন এই বাজারে আনাগোনা হয় হাজারও মানুষের। লইট্ট্যা, ছুরি, চিংড়ি, ফাইস্যা, ফাত্রা, চ্যাপা, কাচকি, মইল্যা, কোরাল, চান্দা, রুপচাঁদা, লাক্ষা- আছে হরেক রকমের শুঁটকি। শুঁটকি ভর্তা, শুঁটকি ভুনা, বেগুন দিয়ে শুঁটকি, কচুমুখী দিয়ে শুঁটকি- এসব যেন খাবারে যোগ করে অন্যরকম মাত্রা।
জেলার আসাদগঞ্জে রাস্তার দুই পাশে সারি সারি শুঁটকির দোকান। এখানে দোকানের সামনে এসে থামতেই দেখা যাবে শুটকি বস্তা থেকে বের করে ঝুড়িতে ( চট্টগ্রামের ভাষায় খাঁচা) সাজিয়ে রাখছেন দোকানের কর্মীরা। বেচাকেনায় ব্যস্ত দোকানির সেদিকে তাকানোর যেন ফুসরত নেই।
হরেক রকমের শুঁটকি সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিটি দোকানের সামনে। কমপক্ষে ৩০-৪০ ধরনের সাজিয়ে রাখা শুঁটকি আছে প্রায় প্রতিটি দোকানেই। বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন আকারের শুঁটকি ভর্তি ঝুড়িগুলোর সামনে ক্রেতাদের ভিড়।
প্রায় ১০০ বছর আগে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষ চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে শুরু করেন শুঁটকি বিক্রির কাজ। ছোট পরিসরে কাজ শুরু হলেও আস্তে আস্তে তা বড় হতে থাকে। এভাবে হতে হতে তিনশোর অধিক দোকান নিয়ে গড়ে উঠে শুঁটকি পল্লী। আবার কেউ কেউ একে শুঁটকির রাজ্য বা শুঁটকি বন্দর হিসেবেও চিনতো। সময়ের পরিক্রমায় সে বৌদ্ধরা আর নেই। তারা না থাকলেও, ব্যবসাটা চলছে।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে লইট্ট্যা শুঁটকি
মাছে-ভাতে বাঙ্গালির খাদ্য তালিকায় মাছ না থাকাটাই যেন অস্বাভাবিক। তাই এই দেশের মানুষের খাদ্যতালিকায় তাজা মাছের পাশাপাশি শুঁটকি স্থান করে নিয়েছে পাকাপোক্তভাবে। শুঁটকি ভর্তা, শুঁটকি ভুনা, বেগুন দিয়ে শুঁটকি, কচুমুখী দিয়ে শুঁটকি- এসব যেন খাবারে যোগ করে অন্যরকম মাত্রা। দিন দিন বেড়েই চলেছে শুঁটকির চাহিদা। এই তালিকায় সবার শীর্ষে আছে লইট্ট্যা শুঁটকি। দেশে-বিদেশে জনপ্রিয় এই শুঁটকির আবেদন যেন শেষ হবার নয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট চিংড়ির শুঁটকি: ৬২ দশমিক ৪ গ্রাম প্রোটিন, ৩৫৩৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৫৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৮ গ্রাম লৌহ ও ২৯২ ক্যালরি।
প্রতি ১০০ গ্রাম ছুরি শুঁটকি: ৭৬ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ৭৩৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৪ দশমিক ২ মিলিগ্রাম লৌহ, ৩৮৩ ক্যালরি।
প্রতি ১০০ গ্রাম টেংরার শুঁটকি: ৫৪ দশমিক ৯ গ্রাম প্রোটিন, ৮৪৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৫ মিলিগ্রাম লৌহ ও ২৫৫ ক্যালরি।
প্রতি ১০০ গ্রাম লইট্টার শুঁটকি: ৬১ দশমিক ৭ গ্রাম প্রোটিন, ১৭৮১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৪০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ২৯৫ ক্যালরি।
প্রতি ১০০ গ্রাম ফাইস্যা মাছের শুঁটকি: ১১ গ্রাম প্রোটিন, ১১৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪৭৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১৮ মিলিগ্রাম লৌহ ও ৩৩৬ ক্যালরি।
আরটিভি/এমএ