images

স্বাস্থ্য পরামর্শ

মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫ , ০৭:২৭ পিএম

images

আমাদের শরীরের ভারসাম্য ও গঠন ধরে রাখতে মেরুদণ্ডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেরুদণ্ড (স্পাইনাল কলাম) হলো হাড়ের একটি জটিল গঠন, যা মাথা থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত সোজা অবস্থায় শরীরকে ধরে রাখে। কিন্তু অনেক সময় এটি স্বাভাবিক সোজা অবস্থান থেকে ডানে বা বাঁয়ে কাত হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থা‌কে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় স্কোলিওসিস।

এই সমস্যাটি শুধু দেহের সৌন্দর্য নষ্ট করে না, বরং দৈনন্দিন চলাফেরা, কাজকর্ম এবং মানসিক স্বস্তিতেও বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অনেকে এটি বয়সের বিষয় বলে এড়িয়ে যান, কিন্তু এটি যেকোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে, যদি আমরা মেরুদণ্ডের যত্ন না নিই বা সচেতন না হই।

স্কোলিওসিস কী?
মেরুদণ্ড বা স্পাইনাল কলাম যখন স্বাভাবিক অবস্থান থেকে ডানে বা বাঁয়ে বেঁকে যায়, তখন তাকে স্কোলিওসিস বলা হয়। মেরুদণ্ডে মোট ৩৩টি হাড় (ভার্টিব্রা) থাকে, যা পাঁচটি ভাগে বিভক্ত:

  • সার্ভাইক্যাল (ঘাড়)
  • থোরাসিক (পিঠ)
  • লাম্বার (কোমর)
  • স্যাক্রাল (নিতম্ব)
  • ককসিজিয়াল (লেজ)

স্কোলিওসিস সাধারণত ঘাড়, পিঠ এবং কোমরের অংশে বেশি দেখা যায়।

কারা বেশি আক্রান্ত হন এবং কেন
এ সমস্যাটি তুলনামূলক বেশি দেখা যায় ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে। তবে ছোট থেকে বড়—সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই এর ঝুঁকি রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের গঠন দুর্বল হতে থাকে এবং স্পাইনাল কলামের আশেপাশের সফট টিস্যু ক্ষয় হতে থাকে, যার ফলে মেরুদণ্ড কাত হয়ে যায়।

এছাড়াও, কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস এ সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে:

  • এক পাশে হেলান দিয়ে টিভি দেখা
  • দীর্ঘ সময় বাঁকা হয়ে কম্পিউটার/ল্যাপটপে কাজ করা
  • অসমান জায়গায় বসে কাজ করা
  • ফোমের বিছানায় কাত হয়ে ঘুমানো
  • গাড়ি চালানোর সময় শরীর বাঁকা রাখা

এই অভ্যাসগুলো মেরুদণ্ডের দুই পাশের মাংসপেশিকে দুর্বল করে তোলে, ফলে মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়।

লক্ষণসমূহ

  • সোজা হয়ে বসতে বা হাঁটতে না পারা
  • শরীরের ভারসাম্য দুই পায়ে সমানভাবে না থাকা
  • এক দিকে হেলে হাঁটা
  • ভারী জিনিস বহন করতে না পারা।
  • সামনে ঝুঁকে কাজ করতে কষ্ট হওয়া
  • কোমর ও পিঠে ব্যথা
  • দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা হাঁটতে সমস্যা হওয়া

চিকিৎসা
স্কোলিওসিস চিকিৎসা শুধু ওষুধ নির্ভর নয়। এই রোগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি যত্ন এবং নিয়মিত ব্যায়ামের প্রয়োজন হয়। 

চিকিৎসার মধ্যে থাকতে পারে:

  • ফিজিওথেরাপি (চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী)
  • এনএসএআইডি ও মাসল রিলাক্সেন্টস
  • ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট
  • স্ট্রেচিং, স্ট্রেনদেনিং ও আইসোমেট্রিক ব্যায়াম
  • হোল্ড-রিল্যাক্স ও স্টেবিলাইজেশন এক্সারসাইজ
  • সঠিক ভঙ্গিমায় বসা ও হাঁটা শেখা
  • সামনে ঝুঁকে কাজ না করা
  • ভারী বস্তু বহন না করা
  • বেশি সময় একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে না থাকা

সঠিক সচেতনতা, শারীরিক সচলতা এবং নিয়মিত ফিজিওথেরাপি মেনে চললে মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

আরটিভি/জেএম