রোববার, ০২ জুলাই ২০২৩ , ০৩:০৩ পিএম
ইসলামে প্রতিটি ইবাদত ও আমলের বাহ্যিক এবং অন্তর্নিহিত দর্শনও রয়েছে। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করা।
বিত্তবান, সচ্ছল ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবানদের জীবনে একবার হজ করা ফরজ। হাজিদের এই আমল হজে যাওয়া-আসার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় না। হজ করার পরও এর শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো প্রয়োজন।
পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে আল্লাহ বলেছেন, নির্দিষ্ট মাসে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজে) হজ অনুষ্ঠিত হয়। অতএব, এই মাসগুলোতে যার ওপর হজ ফরজ হয় সে যেন হজে গিয়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অনাচার ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হয়। তোমরা যেসব সৎ কাজ করো, আল্লাহ তা জানেন। পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহভীতিই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭)
হজের মাধ্যমে আল্লাহর নিরঙ্কুশ একত্ববাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাই হজ থেকে তাওহিদের শিক্ষা নিয়ে ফেরাটা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ ও মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে মহান হজের দিনে মানুষের প্রতি বিশেষ বার্তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে অংশীবাদীদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তার রাসুলের সঙ্গেও নেই। (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩)
হজ থেকে ফেরার পর বেশ কিছু সুন্নাত আমল রয়েছে। যেগুলো পালন করা হাজিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হজরত কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন কোনো সফর থেকে ফিরতেন, তখন মসজিদে নফল নামাজ আদায় করতেন। হজ থেকে ফিরে শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দিতেন। ইসলামী ফিকহের পরিভাষায় সে খাবারকে ‘নকিয়াহ’ বলা হয়।
অন্য এক হাদিসে জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মদিনায় এসেছেন, তখন একটি গরু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। জবাইয়ের পর সাহাবিরা তা থেকে আহার করেছেন। তবে অহংকার, লোকদেখানো ও বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে এমন দাওয়াতের ব্যবস্থা করা ইসলাম অনুমোদন করে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ১৮৫)
যারা হজ করে আসেন তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মুসাফাহ ও কোলাকুলি করা এবং তাদের দিয়ে দোয়া করানো মুস্তাহাব। কিন্তু ফুলের মালা দেওয়া, তাদের সম্মানার্থে স্লোগান ইত্যাদি দেওয়া সীমা লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। (মাসায়েল আওর ইনকিল, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৬২)
হজযাত্রীরা জমজমের পানি সংগ্রহ করেন। এ পানি তারা বাড়িতে নিয়ে আসেন। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। জমজমের পানি নিয়ে এসে লোকদের পান করানো মুস্তাহাব। অসুস্থ রোগীদের গায়ে ব্যবহার করাও বৈধ। (মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ, পৃষ্ঠা: ৩০৩)
আয়েশা (রা.) নিজগৃহে যাওয়ার সময় জমজমের পানি সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং বলতেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) জমজমের পানি সঙ্গে নিতেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস: ১১৫)
মানুষের ইবাদত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হাওয়া প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমিন।