শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ , ০৬:৫৭ পিএম
সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে চিয়া ও তুলসীর দানা খাওয়ার চল বেশ পুরনো। পাতিলেবুর শরবত বা নানা রকমের পানীয়র সাথে তুলসীর দানা ও চিয়া সবার পছন্দের তালিকায় থাকে। তবে লোকমুখে এটি ‘সবজা’ নামেই বেশি পরিচিত। আবার স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, মেদ ঝরাতে চিয়াবীজ ভিজিয়ে সেই পানি খেয়ে থাকেন অনেকে।
প্রতিদিন সঠিক উপায়ে কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলে আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালো রাখা সম্ভব। এর মধ্যে চিয়া ও তুলসী বীজ অন্যতম। যেগুলি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খাওয়া উচিত।
চিয়া: ওজন কমাতে অনেকেই সকালে চিয়া ভেজানো পানি খান। পুষ্টিবিদরা বলেন, চিয়াতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন আছে। এতে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে আছে ফাইবার। ফাইবার হজমে সাহায্যকারী ভাল ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। চিয়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। ভিটামিন, বি, সি এবং ই।
১ টেবিল চামচ চিয়া বীজে থাকে ৫৮ কিলোক্যালোরি, ৫ গ্রাম প্রোটিন, ৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫ গ্রাম ফাইবার, ৩.৮ গ্রাম ফ্যাটি অ্যাসিড বা ফ্যাট, ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম, ১ মিলিগ্রাম আয়রন, ৪০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, ৮৬০ মিলিগ্রাম ফসফরাস।
চিয়া বীজের উপকারিতা:
ফাইবার সমৃদ্ধ: মাত্র ২-৩ চামচ চিয়া বীজেই প্রায় ১০ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে: চিয়ার দ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে, যা হজম, রোগ প্রতিরোধ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
হাইড্রেশন: পানিতে ভিজে তৈরি হওয়া জেল অন্ত্রকে আর্দ্র রাখে, ফলে হজম প্রক্রিয়া মসৃণ হয়।
রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: এটি খাদ্য গ্রহণের পর শর্করা শোষণের গতি কমায়, ফলে রক্তে হঠাৎ চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া রোধ করে।
কীভাবে খাবেন: ১-২ টেবিল চামচ চিয়া বীজ রাতে পানিতে বা দুধে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খান। চাইলে দই বা ওটমিলে মিশিয়ে খেতে পারেন।
তুলসীর বীজ: তুলসীর বীজের গুণও কিছু কম নয়। শরীর ঠান্ডা রাখতে, হজমে সহায়ক বীজটি। এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে তা সাহায্য করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই বীজের ভূমিকা রয়েছে।
১ টেবিল চামচ তুলসীর বীজে মেলে ৫৭ কিলোক্যালোরি। প্রোটিন ২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৭ গ্রাম, ফাইবার ৭ গ্রাম, ফ্যাট ২.৫ গ্রাম। এ ছাড়াও মেলে ক্যালশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন সি এবং ফোলেট।
তুলসী বীজের উপকারিতা:
হজমে সহায়ক: দ্রবণীয় ফাইবার মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণ করে।
অম্বল ও গ্যাসের উপশম: এর ঠাণ্ডা প্রকৃতি গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।
শরীরকে হাইড্রেট রাখে: চিয়ার মতো তুলসীও পানির পরিমাণ ধরে রাখে অন্ত্রে, ফলে হজম ভালো হয়।
রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও ওজন কমাতে সাহায্য করে: ফাইবার ধীরে শর্করা শোষণ করে ও দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি থাকার অনুভূতি দেয়।
কীভাবে খাবেন:
১-২ চা চামচ তুলসী বীজ ১৫-৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খান। চাইলে লেবু বা মধু মিশিয়ে স্বাদ বাড়াতে পারেন।
পুষ্টিগুণে কে এগিয়ে?
সমপরিমাণ চিয়া বীজে প্রোটিন মেলে একটু বেশি। আবার ফাইবার তুলসীর বীজে পাওয়া কিঞ্চিৎ বেশি। উপকারিতায় কেউ কারও চেয়ে কম না। তবে যদি গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার প্রসঙ্গ আসে, তা হলে চিয়ার থেকে তুলসীর বীজ একটু এগিয়ে থাকতে পারে বলছেন পুষ্টিবিদরা।
‘জার্নাল অফ মেডিক্যাল অ্যান্ড হেল্থ সায়েন্সেস’-এ ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা সংক্রান্ত রিপোর্ট বলছে, হাইপোক্যালোরিক ডায়েট এবং চিয়া বীজ ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুতরাং কে, কোনটি খাবেন নির্ভর করবে শরীর এবং প্রয়োজনের উপর। যদি কারও প্রোটিনের চাহিদা কম থাকে, তিনি তুলসীর বীজ খেতে পারেন।
আরটিভি/এসকে