images

রাজনীতি

‘কালো মানিক’ গ্রহণ করেননি খালেদা জিয়া

শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫ , ১০:৪৭ এএম

images

নিজের হাতে লালনপালন করা ‘কালোমানিক’ নামের ষাঁড়টি প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে ঢাকায় আসেন পটুয়াখালীর দরিদ্র কৃষক সোহাগ মৃধা। তবে ষাঁড়টি গ্রহণ করেননি খালেদা জিয়া। পরিবর্তে তিনি সোহাগকে নির্দেশ দিয়েছেন নিজ এলাকায় ফিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের কুরবানি সম্পন্ন করতে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কুরবানির পশু উপহার দেওয়ার জন্য সোহাগ মৃধা ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া, সোহাগ মৃধা ও তার পরিবারের জন্য ঈদের বিশেষ উপহার পাঠিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন।’

এ বিষয়ে সোহাগ বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজে উপস্থিত থেকে আমাকে আপ্যায়ন করেছেন, ঈদ উপহার দিয়েছেন। এটা আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।’

এরআগে,  বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রাম থেকে কালো মানিক নিয়ে ঢাকা আসেন কৃষক সোহাগ মৃধা। একটি মিনি ট্রাকটিকে সাজানো ছিল বিশাল আকারের কালো রঙের এই ষাঁড়টি। গলায় বিএনপি দলের প্রতীকের মালা, গায়ে রঙিন কাপড়।

এ বিষয়ে আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোহাগ আমাদের দলের একনিষ্ঠ, ত্যাগী কর্মী। গরুটি নেত্রীকে উপহার দেওয়ার কথা যখন প্রথম বলল, তখন আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম, আবেগে বলছে। কিন্তু ধাপে ধাপে ওর প্রস্তুতি দেখে এখন স্পষ্ট বুঝি-এটা শুধু আবেগ না, এটা ওর বিশ্বাস, ভালোবাসা আর রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধতা।

তিনি বলেন, আজকাল রাজনীতিতে এতটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখা যায় না। সোহাগ তা প্রমাণ করেছে। আমরা গর্বিত, এমন একজন কর্মী আমাদের ইউনিয়নে আছে। আগামী ক’দিনের মধ্যেই কালো মানিক ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। আমরা তার সফলতা কামনা করি।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামে সোহাগ মৃধা ২০১৮ সালের শেষের দিকে চৈতা বাজার থেকে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনেছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে গাভিটি একটি বাছুর প্রসব করে। পরে গাভিটি বিক্রি করে বাছুরটিকে রেখে দেন তিনি। আর সেই বাছুরই আজকের এই কালোমানিক।
 
ছয় বছরের যত্ন, আদর আর কঠোর পরিশ্রমে বেড়ে উঠেছে বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি। এখন ওজন প্রায় ৩৫ মণ, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। স্থানীয় বাজারে গত বছর কোরবানির সময়ে ষাঁড়টির দাম উঠেছে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সোহাগের সাফ কথা-‘এই ষাঁড় বিক্রির জন্য না-এটা নেত্রীর জন্য।’
 
ঢাকায় ষাঁড়টি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি চলে বেশ কিছুদিন ধরেই। দুইটি মিনি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে। দলের প্রতীকে সুসজ্জিত ব্যানার, কাপড়, এমনকি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গ্রামের শত শত মানুষ মিলে তৈরি করেছে এক আনন্দ-উৎসবের পরিবেশ।
 
এ বিষয়ে সোহাগ মৃধা বলেন, ভাইরালের জন্য না। আমি সত্যিই চাই, নেত্রীর কোরবানির জন্য যাক আমার কালোমানিক। এতে আমার কোনো লাভ নেই-শুধু ভালোবাসা আছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে ২০২৩ সালে সংবাদমাধ্যমে দেখেছিলাম, এক কৃষক গরু উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তখন মনে মনে ইচ্ছা হয়েছিল-যদি কোনো দিন সুযোগ পাই, আমিও আমার প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে একটি গরু উপহার দেব। 

তিনি বলেন, আজ সেই সুযোগ এসেছে। আল্লাহ যদি কবুল করেন এবং নেত্রী যদি এই গরু গ্রহণ করেন, তাহলে আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূরণ হবে। আশা করি, নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না। এ ছাড়া ভালোবাসার হিসাব কষা যায় না ভাই। নেত্রী যদি উপহারটি না-ও নেন, তবু শান্তি পাব-চেষ্টা তো করছি। এইটাই আমার জীবনের বড় পাওয়া।

আরটিভি/এফএ