মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১২:০৭ পিএম
আর দশজন শিশুর মতো ছিল না সোনিয়া আক্তারের জন্ম। দুই হাত ছাড়ায় দেখেন পৃথিবীর আলো। দুইটি পা থাকলেও দেখা যায়, একটি ছোট আরেকটি বড়। আনন্দের পরিবর্তে পরিবারে নামে বিষাদ। সবাই ভেবছিল আজীবন বোঝা হয়ে থাকবে সোনিয়া। কিন্তু সকলের ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে ইচ্ছা আর মনোবল দিয়ে জয় করেছেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার স্তর। পেয়েছেন চমক দেখানো সাফল্য। তার এ প্রচেষ্টার জন্য সম্মাননা দিয়েছে দেশের প্রথম সারির টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) ৩২তম আন্তর্জাতিক ও ২৫তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আরটিভি আয়োজন করে ‘আরটিভি অদম্য সম্মাননা ২০২৩।’ এ অনুষ্ঠানে তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। আরটিভির তেজগাঁও মাল্টিমিডিয়া স্টুডিওতে এ সম্মাননা অনুষ্ঠিত হয়।
ইচ্ছা আর মনোবল থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনো পথচলাকে রুখতে পারে না। যা প্রমাণ করেছেন সোনিয়া আক্তার। ২০২০ সালে এসএসসি পাস করে সাভার সরকারি কলেজে ভর্তি হন। অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর মনোবলের কারণে নিয়ে পা দিয়ে লিখেই মানবিক বিভাগে জিপিএ ৪.৩ পেয়ে এইচএসসি পাস করে চমক দেখিয়েছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের টুকটাক কাজও করেন পা দিয়ে।
আরটিভি থেকে সম্মাননা পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সোনিয়া জানান, সরকারি কর্মকর্তা হতে চান তিনি। হাল ধরতে চান সংসারের।
সোনিয়ার মতো এ বছর আরটিভি অদম্য সম্মাননা পেয়েছেন- প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে সফল ব্যক্তি হেদায়তুল আজিজ মুন্না, প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে সহায়ক গণমাধ্যমকর্মী নীলিমা জাহান (দ্য ডেইলি স্টার), প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে সহায়ক বিদেশি প্রতিষ্ঠান সিবিএম, বাংলাদেশ ও প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে সহায়ক দেশীয় প্রতিষ্ঠান নেত্রকোণার কামরুন্নেছা আশরাফ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়।
‘আরটিভি অদম্য সম্মাননা ২০২৩’ অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা, পরিচালনা ও সঞ্চালনা করেন সৈয়দা মুনিরা ইসলাম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, বিএসএমএমই উপচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ও আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান, ফাউন্ডিং মেম্বার অব বাংলাদেশ ভেলোরি টেলর ও ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিসঅ্যাবিলিটি কনসালটেন্স জুলিয়ান ফ্রান্সিস।
আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা ৪৬ লাখের বেশি। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ছাড়া দেশের টেকসই উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব না। দেশে এমন অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন, যারা তাদের শারীরিক কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কেউ কেউ আছেন যারা শুধু নিজেরাই নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নে অনুসরণীয় অবদান রেখে চলেছেন। আবার এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা প্রতিবন্ধী জনগণের উন্নয়নে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, আরটিভি মনে করে, প্রতিবন্ধিতা বিজয়ী এসব মানুষ এবং প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে যাওয়া প্রচারবিমুখ মহান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবদান জাতির সামনে তুলে ধরলে একদিকে যেমন ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে, তেমনি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করতে আরও অনেকে আত্মনিয়োগ করবে।