বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩ , ১০:৩২ এএম
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা বোয়ালী ইউনিয়নে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘ঢোল সমুদ্র দিঘি’। একসময় এই দিঘিটি দেখতে বিভিন্ন জেলার মানুষ ভিড় জমাতেন।
জানা গেছে, কালিয়াকৈর সদর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার উত্তরে বোয়ালী ইউনিয়নের ঢোল সমুদ্র গ্রামে রয়েছে অতি প্রাচীন বিশাল আয়তনের একটি দিঘি। তার নাম ‘ঢোল সমুদ্র দিঘি’। দিঘিটির রয়েছে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কবে বিশাল আয়তনের দিঘিটি খনন করা হয়, সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই।
জনশ্রুতি আছে, তৎকালীন পাল বংশধর রাজা যশ পাল প্রায় ৫০০ বছর আগে বিশাল আয়তনের এ দিঘিটি খনন করেন। দিঘিটি এতই গভীরভাবে খনন করা হয়েছিল যে, তার ওপর থেকে নিচের তলা দেখা যেত না। তলা না দেখা যাওয়ার ফলে একে তলাছাড়া পুকুর বলা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, দিঘিটি এত গভীরভাবে খনন করা হলেও দিঘিতে বিন্দু পরিমাণ পানিও ওঠেনি। পানি না ওঠায় রাজা পড়ে গেলেন মহাবিপদে। এভাবে কিছুদিন চলে যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন রাজা স্বপ্নে দেখলেন, তার ছয় রানির মধ্যে ছোট রানি যদি ঢাক-ঢোল বাজাতে বাজাতে দিঘিটির ওপর থেকে নিচের তলা পর্যন্ত যায়, তাহলে দিঘিটিতে পানি উঠবে। রাজার কথা মতো ছোট রানি ঢাক-ঢোল বাজাতে বাজাতে দিঘির নিচের দিকে নামতে থাকেন। এভাবে রানি যতই নিচের দিকে নামতে থাকে দিঘিতে তত বেশি পানি উঠতে লাগল। ওই সময় ছোট রানি পানিতে তলিয়ে যান। তারপর থেকে ছোট রানিকে আর দেখা যায়নি। তিনি আর কোনোদিন ফিরেও আসেনি।
ঢোল বাজিয়ে পানি ওঠানো হয়েছে বলে দিঘিটার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ঢোল সমুদ্র’। কিন্তু প্রায় পঞ্চাশ দশক আগে তৎকালীন ওই গ্রামের ডিসট্রিক্ট প্রেসিডেন্ট আবু নাসের ফজলুল হক ওরফে ডা. ইয়াদ আলী এলাকাবাসীর পক্ষে দিঘিটি নিয়ে মামলা করেন। দিঘিটি জনস্বার্থে ব্যবহারের জন্য আদালতের রায় পান। বর্তমানে দিঘিটির আয়তন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। আগে দিঘিটির একপাশ থেকে অন্য পাশ দেখা যেত না। সরকারিভাবে যদি ঐতিহ্যবাহী ওই দিঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। সরকারও আর্থিকভাবে লাভবান হবে জানান স্থানীয়রা।
ঢোল সমুদ্র গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন বলেন, এই পুকুরে ছিল সোনার নৌকা। এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলে, এর আগে দিঘিটির পাড়ে কেউ থালা, বাসন ও পাতিল চাইলে উঠে আসতো। তবে সেগুলো ব্যবহারের পর দিঘিতে পুনরায় ভাসিয়ে দেওয়ার নিয়ম ছিল। কোনো এক লোভী ব্যক্তি এ সব হাড়ি-পাতিল দিঘিতে না ভাসিয়ে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখেন। যার ফলে পরে আর চাইলেও কোনো কিছু পাওয়া যেত না।
ওই গ্রামের সামশুল আলম জানান, এই পুকুরের অনেক ইতিহাস রয়েছে। আমাদের গ্রামে আগে কোনো নলকূপ ছিল না। যার ফলে পুকুরের পানি সকল কাজে ব্যবহার করা হতো। এখন পুকুরটির চারপাশ ভরাট হয়ে ছোট হয়ে আসছে। পানি তেমন পরিষ্কার নেই।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, দিঘি নিয়ে মামলা চলতেছে। মামলা শেষ হলে দিঘিটির খনন কাজ করা হবে।