images

অন্যান্য / ফিচার / বিশেষ প্রতিবেদন

গাছ লতা-পাতাহীন পাথর জঙ্গলের রহস্য

বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ , ১২:৪৫ পিএম

Failed to load the video

এটি এমন এক জঙ্গল, যেখানে গাছপালার সমারোহ নেই, ফুলের সুবাস নেই আছে পাথরের এক বিস্তৃত সমারোহ? হাজার হাজার বছর ধরে বৃষ্টি, বাতাস আর প্রকৃতির অন্যান্য শক্তি মিলে এই পাথরগুলোকে এমন আকৃতি দিয়েছে যা দূর থেকে দেখে মনে হবে প্রকৃতির হাতে গড়া এক পাথরের বন। চীনের ইউনান প্রদেশে অবস্থিত এই বিস্ময়কর বনকে শিলিন অর্থাৎ পাথরের জঙ্গল নামে ডাকা হয়। প্রকৃতির এই অদ্ভুত সৃষ্টি, যা যুগে যুগে মুগ্ধ করে আসছে মানুষকে। এমনকি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের খাতায় রয়েছে এই স্থান। 

শিলিনের পাথরের জঙ্গল আসলে কোনো গাছ নয়, তবে দেখলে গাছের মতোই মনে হয়! এই অঞ্চলের পাথরের স্তম্ভগুলো ২৭০ মিলিয়ন বছর পুরনো চুনাপাথরের তৈরি। একসময় এখানে বিশাল এক সাগর ছিল। সময়ের সাথে মাটি ভেঙে পাথরে পরিণত হয়। আর ঝড় ও পানির জ্বালায় গঠিত হয় অদ্ভুত সব আকারের পাথরের স্তম্ভ, যা দেখে মনে হয় যেন পাথরের জঙ্গল! উচ্চতায় প্রায় ৩০ মিটার অবধি লম্বা পাথরের স্তম্ভগুলো দাঁড়িয়ে আছেগাছের মতোই। আর এই কারণেই প্রাকৃতিকভাবে গঠিত পাথরের স্তম্ভ ‘পাথরের জঙ্গল’ নামে পরিচিত।

এই ‘পাথরের জঙ্গলে’ ঢুকলে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেনএক ভিন্ন জগতে। পাথরের মাঝে সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে, যেন প্রকৃতির গড়া কোনো প্রাচীন নগরীর মধ্যে প্রবেশ করেছেন। এটি এমন এক স্থান, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে রহস্যময়তার এক অদ্ভুত মিশ্রণ পাওয়া যায়।

শিলিন শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, এর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বও। ২০০৭ সালে, শিলিনের এই বিস্ময়কর অঞ্চলকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। পর্যটকরা এখানে এসে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই উপভোগ করেন না, বরং এই স্থানটির সাথে জড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী কিংবদন্তি ও ইতিহাসও আবিষ্কার করেন। শিলিনের ‘আশিমা’ নামক একটি লোকগাথা রয়েছে, যেখানে বলা হয় যে আশিমা নামে এক সুন্দরী মেয়ে পাথরের রূপান্তরিত হয়েছিল।

এই ‘পাথরের জঙ্গল’ নিয়ে গবেষকরা বলছেন, প্রায় ৫০৫ মিটার উচ্চতার স্তরগুলো তৈরি হয়েছে পার্মিয়ান যুগের মাকৌ এবং কিক্সিয়া গঠন থেকে। এই অঞ্চল চীনের বৃহত্তম কার্স্ট অঞ্চলগুলোর একটি। এছাড়াও শিলিন এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ, যেমন চাং হ্রদ ও ইউয়েহ হ্রদ, যা এই অঞ্চলকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।এই বিস্ময়কর স্থানটি শুধু তার ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যেই নয়, স্থানীয় উদ্ভিদকুলের জন্যও বিখ্যাত। এখানে চিরসবুজ বৃক্ষের বন এবং বিশেষ করে কিছু বিরল উদ্ভিদ দেখা যায়, যা ইউনান প্রদেশের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।

আরটিভি/এফআই