সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ , ০৩:৫২ পিএম
Failed to load the video
রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের বছর ২০২৪। শঙ্কা ও সংকটে আওয়ামী লীগ থাকলেও সম্ভাব্য সুদিন এখন বিএনপির। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ২০২৪ ছিল দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে ঘটনাবহুল বছর। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি স্বৈরশাসকের পতন ঘটে এ বছরই। স্বস্তিতে রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি হয় ফেরারি বিএনপির। রাজনীতিতে ফিরেছে নিরুদ্দেশে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামেও।
বছরের শুরু হয়েছিল সমালোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় ডামি যা নির্বাচন নামে পরিচিতি লাভ করে। সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে আন্দোলনে নেমে গ্রেপ্তার হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরুসহ ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী। সরকার পতনের পরদিন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হাজার হাজার নেতাকর্মী ছেড়ে দেন জেল কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরের মার্চের দিকে একের পর এক আওয়ামীপন্থী আমলাদের দুর্নীতি, টাকা পাচারের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে। বাদ যাননি পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ। তবে সাবেক এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের ছেলের ছাগলকাণ্ডই যে ঘটনার সূত্রপাত ঘটায় তা জোড় আলোচনায়। শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের ৪০০ কোটি টাকার ঘটনাও উল্লেখযোগ্য।
কোটা কমিয়ে সরকারি চাকরিতে মেধায় নিয়োগের দাবিতে ২০১৮ সালে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, বিরতি দিয়ে ২০২৪-এ পরিণতি লাভ করে। ছাত্রদের দাবি উপেক্ষা করে বিতর্কিত মন্তব্য করে আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢালেন শেখ হাসিনা।
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দিলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরস্ত্র শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। প্রাণ বাঁচাতে পানি পান করাতে গিয়ে প্রাণ দেন মীর মুগ্ধ। আন্দোলন দমাতে কারফিউ ঘোষণা, সেনা মোতায়েন করেও সুবিধা করতে পারেনি স্বৈরচার সরকার। সমন্বয়কে তুলে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন ও ২০০ এর বেশি মামলায় দুই লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়। এ অবস্থায় জাতীয় ঐক্য ও সরকার পতনের ডাক দেয় বিএনপি। সরকার পতনের সপ্তাহ খানেক আগে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে।
৫ আগস্ট কারফিউ ভেঙে ‘মার্চ টু ঢাকায়’ যোগ দেন লাখো জনতা। আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে ভারতে পালিয়ে যান প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতা আকড়ে থাকা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। গণভবন, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। গা ঢাকা দেন আওয়ামী লীগের জাদরেল নেতারা। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হন ক্ষমতাচ্যুত দলটির প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিরা। কায়দাকানুন করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান কেউ কেউ।
৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। প্রায় সাত বছর পর বিএনপির জনসভায় ভিডিও বার্তা দেন তিনি। এক যুগ পর গত ২১ নভেম্বর সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। টেলিভিশনে বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় তারেক রহমানের।
৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তবর্তী সরকার। জেলে না গিয়ে সরকার গঠন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। চাকরি চেয়ে রাজপথে আন্দোলন শেষে সরাসরি সরকারে যোগ দেন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব। যদিও ফ্যাসিবাদ পতনে প্রাণ দিতে হয় প্রায় ২ হাজার ছাত্র জনতাকে। পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ শিক্ষার্থীকে।
যে তিনটি বড় গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির বাঁক বদল ঘটেছে, তার সবগুলোতে লাভবান হয়েছে বিএনপি। এবারের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বিএনপির। তবে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াত। এদিকে নতুন দল গঠন করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। নতুন বছরের দ্বিতীয় মাসেই তাদের দলের আত্মপ্রকাশের কথা রয়েছে।
আরটিভি/আরএ/এস