রোববার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ০৮:৩৯ পিএম
এক বছরের সালতামামি লিখতে গেলে ক্রিকেটের কত কিছুই ঘাঁটতে হয়। তবে ২০২০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সালতামামি করতে গেলে আপনাকে কিছুই করতে হবে না। সব তো গিলে ফেলেছে এক করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যাপী এই (এফটিপি) ওলট-পালট করে দেয় ক্রীড়াঙ্গনকে, বাদ যায়নি বাংলাদেশও। যেন ২০২০ রূপ নিয়েছিল ২০বিষ-এ।
ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সফর সূচিতে (এফটিপি) ২০২০ সালে ৬টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সঙ্গে ছিল একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও একটি এশিয়া কাপ। অথচ এ বছর নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। এফটিপিতে ১১টি টেস্ট ম্যাচের সূচি উল্লেখ ছিল, যার মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে ২টি, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ১টি, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ২টি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ৩টি, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ছিল ২টি টেস্ট।
বছরের শুরুতে পাকিস্তান সফর করে বাংলাদেশ। তিন দফার পাকিস্তান সফরে নিজেদের পক্ষে আনতে পারেনি ফলাফল। প্রথম দফায় ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর দ্বিতীয় দফায় ছিল ১টি টেস্ট। এই ম্যাচে ৪৪ রানে জয় পায় স্বাগতিক পাকিস্তান। তৃতীয় দফায় আর যাওয়া হয়নি করোনা মহামারির কারণে। স্থগিত হয়েছে ১টি টেস্ট ও ১টি ওয়ানডে ম্যাচ।
পাকিস্তান সিরিজের মাঝে বাংলাদেশ সফরে আসে জিম্বাবুয়ে। এফটিপিতে ১ টেস্টের সঙ্গে ৫ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ উল্লেখ থাকলেও সেটির পরিবর্তে হয় ১ টেস্ট, ২ টি-টোয়েন্টি ও ৩ ওয়ানডে।
এই সিরিজ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করে বাংলাদেশ। কোনো ফরম্যাটেই জিম্বাবুয়েকে জিততে দেয়নি টাইগাররা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে সিলেটে অধিনায়ক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফল নায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
এরপর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। বন্ধ হয়ে যায় চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও। একে একে স্থগিত হয়েছে ৪ টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ব একাদশ ও এশিয়া একাদশের দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল । ম্যাচ দুটি মার্চে অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায় মহামারিতে।
মে মাসে ৩ ওয়ানডে, ৪টি টি-টোয়েন্টি খেলতে আয়ারল্যান্ড সফর কথা ছিল বাংলাদেশের। জুনে ২টি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ সফর করার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার।
এরপর জুলাইতে ৩ ম্যাচের টেস্ট খেলতে শ্রীলঙ্কা সফর করার কথা ছিল বাংলাদেশের। পরে এই সিরিজ আশার আলো দেখলেও দুই বোর্ডের বনিবানা না হওয়ায় পুনরায় স্থগিত হয়ে যায়।
এদিকে সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২টি ম্যাচ খেলতে।
সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ (টি-টোয়েন্টি) অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও ভেস্তে যায় করোনা মহামারিতে। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর স্থগিত হয়ে যাওয়া।
এ বছর বাংলাদেশ মাত্র ৩টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে যা ১৯৯৫ সালের পর এত কম ওয়ানডে খেলেছে টাইগাররা।
এসবের মাঝেও বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় খুশি এনে দেয় অনূর্ধ্ব-১৯ এর যুবারা। তাদের হাত ধরে বছরের শুরুতে আসে বিশ্বকাপ। এ যাবত কালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সাফল্য যে এটিই!
বছরের প্রায় ৮ মাস দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে না গড়ালেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বছরটা শেষ করেছে দুটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট দিয়ে। প্রথমে ৩ দল নিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপ আয়োজন করা হয়। যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয় মাহমুদউল্লাহ একাদশ।
এরপর নভেম্বরে ৫ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে ক্রিকেটে ফিরেন ১ বছরের নিষেধাজ্ঞায় থাকা সাকিব আল হাসান। শেষ পর্যন্ত আসর সেরাও হয় তার দল জেমকন খুলনা। এই দলেরও নেতৃত্ব দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এমআর/এমকে