শনিবার, ২৭ মে ২০১৭ , ১১:৪৭ পিএম
ক্রিকেট যে চরম অনিশ্চয়তার খেলা তা ফের প্রমাণ করলো পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে খাবি খেতে থাকা সরফরাজ বাহিনী শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়লো। ৩৪২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২৪৯ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এরপর যা ঘটেছে তার কাছে রূপকথার গল্পও হার মানবে। দু’টেইলএন্ডার ফাহিম আশরাফ ও হাসান আলির তাণ্ডবে ৩ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করেছে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আন্ডারডগ হয়ে খেলতে আসা দলটি।
৩৪২ রানের পাহাড় টপকাতে গিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। দলীয় মাত্র ১৯ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন তাদের দু’ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত ৮ রান করে তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন আজহার আলি (৮)। তার বিদায়ের পরপরই মাশরাফির বলে সেই মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাবর আজম (১)।
এরপর মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেন আহমেদ শেহজাদ। তারা এগিয়েও যাচ্ছিলেন বেশ। তবে তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব আল হাসান। দলীয় ৭৮ রানে শেহজাদকে (৪৪) বোল্ড করে ফেরান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
শেহজাদ ফিরে গেলে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন শোয়েব মালিক। তাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ হাফিজ। তাকে যোগ্য সঙ্গও দেন মালিক। দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন। তবে দলীয় ১৫৭ রানে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে হাফিজকে (৪৯) ফিরিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা জুটিতে ছেদ টানেন শফিউল ইসলাম। এর সঙ্গে খেলায় ফিরে বাংলাদেশ।
এর পর পরই সরফরাজ আহমেদকে (৫) সানজামুল ইসলামের হাতে ক্যাচ বানিয়ে পাকিস্তানকে চেপে ধরেন মোসাদ্দেক হোসেন।
সেই চাপের মধ্যে একপ্রান্ত আগলে রেখে ইমাদ ওয়াসিমকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান শোয়েব মালিক। সেই লড়াইয়ে বিশ্বস্ত সহযোদ্ধার মতোই তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন ইমাদ। তবে সহযোদ্ধা পেয়েও স্বার্থ হাসিল করতে পারেননি মালিক। দলীয় ২২৭ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ইমরুল কায়েসের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৬৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৭২ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন এ অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
তার বিদায়ের সঙ্গে আরো চাপে পড়ে পাকিস্তান। সেই চাপের মধ্যে মিরাজের রানআউটের শিকার হয়ে ফেরেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান শাদাব খান (৭)। দলীয় ২৪৯ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ইমাদ ওয়াসিম (৪৫) ফিরে গেলে খাদের কিনারে পড়ে তারা।
তবে শেষদিকে ফাহিম আশরাফ ও হাসান আলির ঝড়ে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের। তাদের কাছে নাকানিচুবানি খায় বাংলাদেশের বোলাররা। শেষ পর্যন্ত তাদের কল্যাণে ২ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে পাকিস্তান। ৩০ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৪ রান করে ফাহিম আশরাফ ও ১৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন হাসান আলি।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর ১টি করে করে উইকেট যায় মাশরাফি, সাকিব, তাসকিন, শফিউল ও মোসাদ্দেকের দখলে।
শনিবার বার্মিংহামের এজবাস্টনে টস জেতে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪১ রান করে বাংলাদেশ।
দলের হয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। ৯৩ বলে তার ১০২ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৪ ছক্কা ও ৯ চারে। এদিন দুর্দান্ত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন টেস্টে তামিমের ওপেনিং সঙ্গী ইমরুল কায়েস। তার ৬২ বলে ৬১ রানের ইনিংসটি ছিল ৮ চারে সাজানো। মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক করেন ৩৫ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৬ রান। নির্ভযোগ্য ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। এছাড়া উদীয়মান অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন করেন ১৫ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ রান।
পাকিস্তানের হয়ে জুনায়েদ খান নেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট। আর ২টি করে উইকেট নেন হাসান আলি ও শাদাব খান।
ডিএইচ