সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩ , ০৫:৩৫ পিএম
ভারতের সাবেক অধিনায়ক, কিংবদন্তি স্পিনার বিষেন সিং বেদি আর নেই। দীর্ঘদিন অসুস্থতায় ভোগার পর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। ফ্লাইট এবং ঘূর্ণির নান্দনিক সৌন্দর্যে মোড়া ছিল তার বোলিং স্টাইল। বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনের যে জাদুতে মগ্ন বর্তমান ক্রিকেটবিশ্ব, তার শুরুটা হয়েছিল বিশান সিংয়ের মাধ্যমেই। তার নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতেছিল ভারত।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বিবৃতিতে বেদির মৃত্যুর খবর জানিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। বিবৃতিতে বিসিসিআই জানিয়েছে, ‘ভারতের টেস্ট অধিনায়ক ও কিংবদন্তি স্পিনার বিষান সিং বেদির মৃত্যুতে বিসিসিআই শোকাহত। এই কঠিন সময়ে পরিবার ও সমর্থকদের জন্য আমাদের প্রার্থনা। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক।’
১৯৪৬ সালে অমৃতসরে জন্ম নেওয়া বিশান সিং বেদি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। দেশটির স্পিন বিভাগের নেতৃত্ব দিয়ে ৬৭ টেস্টে ২৬৬টি উইকেট নিয়েছেন এই কিংবদন্তি। ১০ ওয়ানডে ম্যাচের ক্যারিয়ারে নেন ৭টি উইকেট।
ভারতের প্রথম ওয়ানডে জয়ের নায়ক ছিলেন এই স্পিন জাদুকর। ১৯৭৫ বিশ্বকাপের সে ম্যাচে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১২০ রানে গুটিয়ে যায় পূর্ব আফ্রিকা। ম্যাচে ১২ ওভারে ৮ মেইডেনসহ ৬ রানে ১ উইকেট ছিল বেদির বোলিং ফিগার ছিল।
মনসুর আলি খান পতৌদির পরে ১৯৭৬ সালে ভারতের অধিনায়কত্ব পান তিনি। ১৯৭৭-৭৮ অস্ট্রেলিয়ান সামারে তার নেতৃত্বে অজিদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিল ভারত। সেই সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে হারলেও বেদির দলের লড়াই বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। মেলবোর্ন ও সিডনিতে জিতেছিল তৃতীয় ও চতুর্থ টেস্ট।
ঘরোয়া কাঠামোর বেশির ভাগ সময়ই খেলেছেন দিল্লির হয়ে। তবে শুরুটা উত্তর পাঞ্জাবের হয়ে। দিল্লির হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ৩৭০ ম্যাচে নেন ১৫৬০ উইকেট। ১৯৭৮-৭৯ ও ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে বেদির নেতৃত্বে নিজেদের প্রথম দুটি রঞ্জি ট্রফি জেতে দিল্লি। তার নেতৃত্বে দুবার রানার-আপও হয়। বেদি পাঁচ বছর অধিনায়কত্ব থাকাকালীন চারটি ফাইনাল খেলে দিল্লি।
বেদির কীর্তি দেশ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বিদেশেও। ইংলিশ কাউন্টি সার্কিটে বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন তিনি। নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত ১০২ ম্যাচ খেলে নেন ৪৩৪ উইকেট। কাউন্টি ক্রিকেটে ভারতীয়দের যা সর্বোচ্চ।
মাঠের ক্রিকেট থেকে অবসরের পর, নিমগ্ন হন পরের প্রজন্ম গড়তে। ভারতের ক্রিকেট কাঠামোর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এই কৃতি ক্রিকেটার তার অসাধারণ অবদানের জন্য দেশটিতে সবার শ্রদ্ধার পাত্র বনে থাকবেন। তাই কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারকে হারিয়ে শোকাহত পুরো ভারতবর্ষ।