সোমবার, ১২ মে ২০২৫ , ০২:৫৭ পিএম
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত বেশ কয়েকদিন আগেই বিসিসিআইকে জানিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। তবে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও একবার ভাবতে বলা হয়েছিল তাকে। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন কোহলি। সেই সাথে উঠে এসেছে কোহলির অবসর নেওয়ার পাঁচটি কারণ।
সোমবার (১২ মে) নিজের ভেরিফায়েড ইনস্টগ্রামে এক পোস্টের মাধ্যমে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন ভারতের এই কিংবদন্তি ব্যাটার।
বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে কোহলি লিখেন, ১৪ বছর আগে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের নীল ব্যাগি টুপি পড়েছিলাম। সত্যি বলতে তখন জানতাম না, ক্রিকেটের এই ফরম্যাট আমাকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। কল্পনাও করিনি। এই ফরম্যাট আমার পরীক্ষা নিয়েছে। আমাকে তৈরি করেছে। আমাকে শিক্ষা দিয়েছে। সারা জীবন এই শিক্ষা বহন করব।
তিনি আরও লিখেন, সাদা পোশাকে খেলার মধ্যে কিছু গভীর বিষয় থাকে। শান্ত পরিবেশ, দীর্ঘ সময় খেলা, ছোট ছোট মুহূর্তগুলো কেউ দেখতে পায় না। তবে এগুলো চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে।
দেখে নেওয়া যাক কোহলির অবসর নেওয়ার পাঁচটি কারণ:
পরিবারকে বেশি সময় দেওয়া
গত কয়েক বছর ধরে দুর্বল দলগুলোর বিপক্ষে খেলতেন না কোহলি। তাই মাঝেমাঝেই দল থেকে বিশ্রাম নিয়েছেন।লন্ডনে বাড়ি কিনেছেন কোহলি। জানিয়েছেন, অবসরের পর লন্ডনে পরিবার নিয়ে চলে যাবেন তিনি। দুই সন্তানকে নিয়ে কোহলি হয়তো পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চাইছেন। এক দিনের সিরিজ এখন কম হয়। ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেললে বছরে খুব বেশি সময় মাঠে থাকতে হবে না তাকে। যার ফলে পরিবারকেও বেশী সময় দিতে পারবেন। হয়তো সেই কারণেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন বিরাট কোহলি।
রোহিতের অবসর
ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি প্রায় একই সময়ে ভারতের হয়ে খেলা শুরু করেন। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এই দু'জন। মাঠ ও মাঠের বাইরে রোহিত-কোহলির সম্পর্ক বেশ ভাল। একসঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা নিজ দেশে বয়ে নিয়ে আসেন তারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে মাঠে দাঁড়িয়েই অবসরের কথা জানান কোহলি। তার কিছুক্ষণ পর রোহিতও অবসরের কথা জানিয়ে দেন। হয়তো প্রিয় বন্ধু ও সহযোদ্ধার জন্য অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোহলি।
গম্ভীরের তারকা-সংস্কৃতি
অস্ট্রেলিয়া সফরের পরে ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তার দলকে তারকা-সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দলে কাউকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে না। প্রত্যেকে সমান। তার পর থেকে প্রত্যেককে একই টিমবাসে হোটেল ও মাঠে যেতে হচ্ছে। কাউকে ব্যক্তিগত রাঁধুনি নিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। গম্ভীরের এই সিদ্ধান্তও কোহলির টেস্ট থেকে অবসরের একটি কারণ হতে পারে।
শারীরিক ধকলের চাপ
বিশ্বের ফিট ক্রিকেটারদের মধ্যে কোহলি একজন। উইকেটে তার দৌড় বা ফিল্ডিং করার সময় তাকে দেখলেই স্পষ্ট বূুঝা যায়। কিন্তু সেই কোহলিও এখন শারীরিক ধকল নিতে সমস্যায় পড়ছেন। দীর্ঘ সময় ব্যাট করলে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। বেশি দু’রান নিতেও সমস্যা হচ্ছে। মাঠে যেনো তারই প্রভাব পরছে। টেস্ট খেলার ধকল অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাট করার পর আবার টানা ৯০ ওভার ফিল্ডিংও করতে হয়। আইপিএলে কোহলি জানিয়েছিলেন, ৩৭ বছর বয়সে বড় ইনিংস খেলতে কষ্ট হয়। শারীরিক ধকল সামলাতেই টেস্ট ক্রিকেট ছাড়লেন তিনি।
ব্যর্থতার চাপ
ভারতের হয়ে ১২৩টি টেস্ট খেলে ৪৬.৮৫ গড়ে ৯,২৩০ রান করেছেন কোহলি। ৩০টি শতরান ও ৩১টি অর্ধশতরান রয়েছে তার নামের পাশে। এই মানের একজন ব্যাটার গত কয়েক বছর ধরে রান পেতে সমস্যায় পড়ছেন। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দিন-রাতের টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে শতরানের পর থেকে শুরু হয় দীর্ঘ দিনের খরা। এর পর ৪৪টেস্ট খেলে শতরান করতে পারেননি তিনি। প্রায় চার বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আহমেদাবাদে করেছিলেন শতরান।এর পর ২৯টি ইনিংস পরে মাত্র দু’টি শতরান করেন।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন রোহিত শর্মা। তাই এই দুই তারকাকে ছাড়াই ভারতকে ইংল্যান্ড সফরে যেতে হবে। এর আগে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন রোহিত-কোহলি। সে হিসেবে দুজনই এখন কেবল ওয়ানডে তথা একদিনের ক্রিকেট খেলবেন।
আরটিভি/এসকে