বুধবার, ২১ মে ২০২৫ , ০৯:৪২ পিএম
বাবুল মিয়ার সাত সদস্যের সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে। নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। কখনও অন্যের জমিতে কাজ করেন, কখনও কিশোরগঞ্জের হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারপরও নুন আনতে পানতা ফুরোনোর মতো অবস্থা বাবুল মিয়ার।
এত টানাপোড়েনের মাঝেও বাবুল মিয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। যখন তার মেয়ে মাইশা আক্তার মীম কোনো সাঁতার প্রতিযোগিতায় সোনা জেতেন।
বুধবার (২১ মে) মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সে শুরু হয়েছে ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা। সারা দিনে ২৪টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনের একমাত্র রেকর্ড গড়েছেন মীম। বিকেএসপির দশম শ্রেণির ছাত্রী মীম সব মিলিয়ে তিনটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে সব কটিতেই সোনা জিতেছেন। তবে মীম ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সোনা জেতেন রেকর্ড গড়ে। তিনি সময় নিয়েছেন ১.০৭: ৫৪ সেকেন্ড।
মীম ভেঙেছেন ১৩ বছরের পুরনো জাতীয় রেকর্ড, যেটি ২০১২ সালে করেছিলেন বাংলাদেশ আনসারের নাজমা খাতুন। বাবুল মিয়া ও মোসাম্মৎ নাসরিন দম্পতির পাঁচ সন্তান। এর মধ্যে মীম দ্বিতীয়। মামা রবিউল হাসান স্বপনের উৎসাহে সাঁতারে আসা মীমের। ২০১৯ সালে মীম বিকেএসপিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
নিজের টাইমিং নিয়ে খুব সন্তুষ্ট নন মীম। সাঁতার শেষে সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, আজ যে টাইমিং করেছি সেটা আরেকটু ভালো হতে পারত। কিন্তু আজ আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। এবার দিয়ে চতুর্থবার বয়সভিত্তিক সাঁতারে অংশ নিয়েছেন মীম। এ পর্যন্ত তার সেরা সাফল্য গত আসরে। সেবার তিনি ৭টা সোনা, ২টা রুপা জেতেন। এর মধ্যে ২টা ইভেন্টে রেকর্ড গড়েন।
কিন্তু এবার সব কিছু টপকে যেতে চান, ‘এবার ৯টি ইভেন্টে সবকটিতেই সোনা জিততে চাই। এবার সেরা সাঁতারু হতে চাই।’ কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে উঠে এসেছেন কারার ছামেদুল, কারার মিজান, আরিফুল ইসলামদের মতো অনেক সাঁতারু। সেই নিকলির কুর্শা গ্রামে জন্ম মীমের।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের সবাই খেলাধুলা সমর্থন করেন। আব্বু আমাকে নদীতে নিয়ে যখন সাঁতার শেখান তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। কোচ শরিফুল ইসলামের কাছে অনুশীলন করে বিকেএসপিতে সুযোগ পান মীম।
রেকর্ড গড়ে সোনা জিতলে ৫ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার দিচ্ছে সাঁতার ফেডারেশন। টাকা পেয়ে উচ্ছ্বসিত মীম বাবার হাতে সব টাকা তুলে দেবেন। এই বয়সেই সংসারের ভার যেন কাঁধে নিতে হচ্ছে মীমকে।
ক্যারিয়ারের প্রথম জেতা পুরস্কারের টাকা বাবা দেনা শোধ করেছিলেন বলে জানান তিনি। মীমের ভাষ্য, আমার প্রথম জেতা পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাবা ঋণ শোধ করেন। সেবার আমি দুটো রেকর্ড গড়ে ১০ হাজার টাকা পাই। আর বিকেএসপি থেকে আমাকে দেয় আরও ১০ হাজার টাকা। আমার আব্বু একা কাজ করেন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। টাকাটা পেয়ে আব্বু খুব খুশি হয়েছিলেন।
জুনিয়রে অংশ নেওয়া মীম স্বপ্ন দেখেন অলিম্পিকে সাঁতরানোর। তবে ওয়াইল্ড কার্ড নয়। নিজের যোগ্যতায় যেতে চান, আমি অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে যেতে চাই না। নিজের যোগ্যতা দিয়ে যেতে চাই।
আরটিভি/এসআর-টি