বুধবার, ২৭ জুন ২০১৮ , ০৯:৪৯ পিএম
এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে লজ্জাজনকভাবে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। জার্মানি এবারের বিশ্বকাপ মেক্সিকোর কাছে পরাজয়ের মাধ্যমেই শুরু করে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হার দিয়ে সফর শেষ করলো। মাঝখানে সুইডেনকে পরাজিত করে নিজেদের সুযোগ তৈরি করে রেখেছিল। কিন্তু শেষ ম্যাচে তারা এশিয়ার দলটির কাছে হেরে যায়।
এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিল। এর আগে ২০০৬ এর চ্যাম্পিয়ন ইতালি, ২০১০ এর চ্যাম্পিয়ন স্পেনেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে জার্মানি কখনোই প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়েনি। ব্যতিক্রম শুধু ১৯৩৮ বিশ্বকাপ। সেবার টুর্নামেন্ট শুরুই হয়েছিল শেষ ষোলোর নকআউট পর্ব থেকে। সুইজারল্যান্ডের কাছে টাইব্রেকারে হেরে সেবার বাদ পড়েছিল জার্মানি।
ম্যাচ শুরুর আগে মেক্সিকোর ২ ম্যাচে মেক্সিকোর পয়েন্ট ছিল ৬, সুইডেন ও জার্মানির পয়েন্ট ছিল ৩। জার্মানি গোল খাওয়ার আগেই সুইডেন মেক্সিকোকে তিন গোল দিয়ে দেয়ায় গোল গড়ে পিছিয়ে যায় মেক্সিকো। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র এক গোলের ব্যবধানে জয় পেলেও জার্মানি চলে যেতো নক আউট পর্বে। তখন গোল গড়ে বাদ পড়ে যেতো মেক্সিকো।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: নতুন বলে নক আউট
--------------------------------------------------------
ম্যাচের শুরু থেকেই নিজেদের রক্ষণ ঠিক রেখে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের রক্ষণে আক্রমণ করতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া। গোলের জন্য মরিয়া জার্মানিও পাল্টা আক্রমণ করতে থাকে। কিন্তু কোরিয়ানদের রক্ষণদূর্গে তারা ফাটল ধরাতে পারেনি।
বল দখলের লড়াইয়ে ৭৫ ভাগ ছিল জার্মানির কাছে আর দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ছিল ২৫ ভাগ। তবে পোস্ট লক্ষ্যে কোরিয়া শট নিয়েছে ৫টি এবং জার্মানি শট নিয়েছে ৪টি। দক্ষিণ কোরিয়া পাস দিছে মাত্র ১২৮টি এবং জার্মানি পাস দিয়েছিল ৩৭৭টি।
খেলার ৬ষ্ঠ মিনিটেই দারুণ এক আক্রমণ করে জার্মানি। মার্কো রেউসের ডান পায়ের শট বারের পাশ দিয়ে চলে যায় বাইরে। ১৪ মিনিটেই টনি ক্রুসের দারুণ এক ক্রস থেকে অসাধারণ হেড নেন স্যামি খেদিরা। কিন্তু দুভাগ্য জার্মানির। সেই বল ঠেকিয়ে দেন দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক।
দুই মিনিট পর আবারও আক্রমণ। এবার মেসুত ওজিলের ক্রস থেকে দারুণ এক হেড নেন নিকলাস শুলে। তবে তার সেই হেড ফিরিয়ে দেন দক্ষিণ কোরিয়ান ডিফেন্ডাররা।
২৫ মিনিটে লি ইয়ংয়ের ক্রস থেকে ভেসে আসা বলে হেড করেন লি জায়ে সুং। কিন্তু জার্মান ডিফেন্ডাররা ফিরিয়ে দেন সেই হেড। তার খানিক পরই দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন সন হিউং মিন। কিন্তু তার নেয়া ডান পায়ের শটটি চলে যায় জার্মানির গোল পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে।
৩৯ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন লিওন গোরেৎজকা। টনি ক্রুসের কর্ণার কিক থেকে ভেসে আসা বলে হেড নিয়েছিলেন গোরেৎজকা। কিন্তু সেই বলটি রুখে দেন গোলরক্ষক। ওই প্রায় একই সময়ে ম্যাট হ্যামেলসের শট গোলমুখে ঝাঁপিয়ে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক জো হিউন।
প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে (৪৫+৩) সন হিউং মিনের ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট বক্সের বাইরে চলে যায়। বেঁচে যায় জার্মানি। বলটি সোজা গেলে হয়তো বা পোস্টেও যেতে পারতো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় জার্মানি। যে কারণে ৪৭ মিনিটেই দুর্দান্ত এক গোলের সুযোগ পেয়েছিল জার্মানরা। জশুয়া কিমিচের ক্রস থেকে ভেসে আসা বলে গোরেজৎকা অসাধারণ এক হেড নেন। বল নিশ্চিত জালে প্রবেশ করে যাচ্ছিল। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়েন দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক। অসাধারণ দক্ষতায় বলকে পাঠিয়ে দিলেন বাইরে। নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হলো জার্মানরা।
লার ৭০ মিনিটে টনি ক্রুস বাম পায়ের শট নেন। কিন্তু তার এই শটটি চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। ৭৮ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন সন হিউং মিন। লি জায়ে সুংয়ের পাস থেকে বল পেয়েছিলেন সন। কিন্তু পোস্টের কাছে গিয়েও বলটি হারিয়ে ফেলেন তিনি।
৮২ মিনিটে সুযোগ পেয়েছিলেন থমাস মুলার। জশুয়া কিমিচের পাস থেকে বল পেয়ে দারুণ এক হেড নিয়েছিলেন মুলার। কিন্তু বক্সের ওপর দিয়ে চলে যায় সেই বলটি। এক মিনিট পরই মার্কো রেউস শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তার ডান পায়ের শট চলে অনেক বাইরে দিয়ে। ৮৭ মিনিটে নিশ্চিত আরও একটি গোল মিস করে ফেলেন ম্যাট হ্যামেলস। মেসুত ওজিলের ক্রস থেকে ভেসে আসা বলে সঠিকভাবে মাথায় বল লাগাতে পারেননি।
ম্যাচটি যখন ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছিল ঠিক তখন গোল করে জার্মানির স্বপ্ন গুড়িয়ে দেন কিম ইয়ং গোয়ন। ম্যাচের তখন ৯২ মিনিট চলছে। ওদিকে খবর চলে এসেছে সে মেক্সিকোকে গুড়িয়ে দিয়েছে সু্ইডেন। বিশ্বকাপের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে হলে গোল করতে হবে। এটা ভেবেই জার্মানির পুরো দলই উঠে এলো আক্রমণে। ম্যাচের শেষ মিনিটে উঠে আসেন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়ারও। এই সময়ে ফাঁকা গোল পোস্ট পেয়ে গোল করেন সং ইয়ং মিন।
এই হারে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো জার্মানদের। এর আগে কোনো বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়তে হয়নি দলটিকে।
এএ