মুসলমানদের পবিত্র উৎসব ঈদুল ফিতর ঘিরে প্রতিবছরই রাজধানীবাসীর বড় একটি অংশ পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেত গ্রামে ছুটে যান। তাই ঘরমুখো মানুষ ঈদ উৎসব উপভোগ করতে অগ্রিম টিকিটের জন্য কাউন্টারগুলোতে ভিড় করছে। এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। ২৬ কিংবা ২৭ জুন ঈদুল ফিতর হতে পারে। তাই বাস ও ট্রেনের অগ্রীম টিকেট কিনতে ঘরমুখো মানুষ সোমবার থেকে ছুটে বেড়াচ্ছে কাউন্টারগুলোতে।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদ উপলক্ষে বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। সোমবার বৃষ্টির কারণে বাস কাউন্টার ও রেল স্টেশনে তেমনটা ভিড় না থাকলে মঙ্গলবার ছিল উপচে পড়া ভিড়। টিকেট প্রত্যাশী নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি যেন কমছে না। টিকেট পেতে অনেককে দেখা গেছে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে। এর মাঝে লাইনে থেকে অনেককে ইফতারি করতে দেখা গেছে। অপেক্ষার পালা শেষেও টিকেট না পেয়ে অনেকে বাড়ি ফিরেছেন মলিনমুখে। কেউবা টিকেট পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন।
মঙ্গলবার গাবতলী, কল্যাণপুর, সায়দাবাদসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টার এবং কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
অপেক্ষমাণ যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে কাউন্টারগুলোতে টিকেট দিচ্ছে। দীর্ঘ লাইনে মানুষ দাড়িয়ে থাকার পরও কাউন্টারের ভেতর থেকে কালোবাজারিরা স্বল্প সময়ে টিকেট নিয়ে তা বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি প্রত্যাশিত টিকেট চোখের সামনে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। পরে কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকেট শেষ। সে সঙ্গে অনেক স্থানে টিকেটের দাম বেশি নেওয়ার ও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সায়দাবাদে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে কথা হয় ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের সঙ্গে। ঈদে তিনি যাবেন রংপুর। কিন্তু বিকেলে ৩ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি টিকেট পাননি। মহাখালীতে এনা পরিবহনের কাউন্টারে ভোর থেকে টিকেটের জন্য ভিড় জমান অনেকে। টিকেট দেয়া হচ্ছে খুব ধীর গতিতে। সকাল ১০টার দিকে রোদের মধ্যে এ কাউন্টারের বাইরে নানা বয়সী মানুষকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
গাবতলী, কল্যাণপুর, মাজার রোডের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে। এখানে কাউন্টারগুলোয় অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিকভাবেই টিকিট বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বেশ কয়েকটি বাস কোম্পানিগুলোর কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৬০টিরও বেশি রুটে এ অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ জুনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে ২২ ও ২৩ তারিখের টিকেটের চাহিদাটা বেশি।
অন্যদিকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার দেখা দিয়েছে বেশি ভিড়। সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও। টিকেটের জন্য অনেকে ভোর থেকে অপেক্ষা করছেন বলে জানা যায়। তবে এবার ভিড় বেশি থাকায় নারী কাউন্টারের সংখ্যা একটি থেকে বাড়িয়ে দুটি করা হয়েছে।
কমলাপুর রেল স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ট্রেনের সকল রুটে মিলিয়ে ৫৫ হাজারের মতো টিকেট দেয়া হবে ২৩টি কাউন্টারের মাধ্যমে। এরমধ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য বিক্রি করা হবে ২২ হাজার ১২২টি টিকেট। তবে শতভাগ টিকেটের মধ্যে ৬৫ শতাংশ টিকেট কাউন্টারে দেওয়া হয়। এরমধ্যে ২৫ শতাংশ টিকেট অনলাইনে, ৫ শতাংশ ভিআইপি কোটা, ৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ থাকে।
সোমবার বিক্রি হয় ২১ জুনের টিকেট। ১৩ জুন বিক্রি করা হবে ২২ জুনের টিকেট। ১৪ জুন বিক্রি হবে ২৩ জুনের টিকেট। ১৫ ও ১৬ জুন যথাক্রমে ২৪ ও ২৫ জুনের টিকেট বিক্রি করা হবে। অগ্রিম টিকেট বিক্রির এই কার্যক্রম শেষ হবে ১৬ জুন। অপরদিকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার জন্য রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে। ১৯ জুন বিক্রি হবে ২৮ জুনের টিকেট, ২০ জুন বিক্রি হবে ২৯ জুনের টিকেট, ২১ জুন বিক্রি হবে ৩০ জুনের টিকেট, ২২ জুন বিক্রি হবে ১ জুলাইয়ের টিকেট, ২৩ জুন বিক্রি হবে ২ জুলাইয়ের টিকেট।
এমসি/ এমকে