সাবেক আইজিপির অঢেল সম্পদে হতবাক হাইকোর্ট

আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪ , ০৩:৪৭ পিএম


সাবেক আইজিপির অঢেল সম্পদে হতবাক হাইকোর্ট
ছবি: সংগৃহীত

একজন আইজিপি কীভাবে এত অঢেল সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন রাখেন হাইকোর্ট। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, আমাদের বিষয়টি হতবাক করেছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১১ জুন) যশোরে স্থানীয় সরকার বিভাগের কয়েকটি সেতু নির্মাণে অনিয়মের শুনানিকালে বিচারপতি কামরুল কাদের ও খিজির হায়াতের বেঞ্চ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন। রিটকারী আইনজীবী শামসুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

শুনানিকালে আদালত বলেন, আপনাদের অনিয়মের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। দেশ-বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে একজন সরকারি কর্মকর্তার অনিয়ম-দুর্নীতি। একজন আইজিপি কীভাবে এত অঢেল সম্পদের মালিক হলেন। এটি আমাদের বিস্মিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, রাজধানীর গুলশানে মোট ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট আয়তনের চারটি ফ্ল্যাট মাত্র ২ কোটি ১৯ লাখ টাকায় কিনেছেন। সেই হিসেবে প্রতি বর্গফুটের দাম পড়েছে ২ হাজার ৩৮২ টাকা। তবে রাজধানীতে ফ্ল্যাট ও জমি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এই দামে গুলশানের মতো অভিজাত এলাকা তো দূরের কথা, ঢাকার আশপাশের এলাকায়ও ফ্ল্যাট পাওয়া যাবে না।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) একাধিক সদস্য জানান, জমির দামের সঙ্গে নির্মাণ ব্যয় সমন্বয় করে ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে গুলশান-বনানীতে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট প্রতি বর্গফুট ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নামী রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর ফ্ল্যাটের দাম আরও বেশি। সে হিসেবে ৯ হাজার বর্গফুট রিয়েল এস্টেটের মূল্য কমপক্ষে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তারা জানান, কর ফাঁকি দিতে অনেকে কম দাম দেখিয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করেন। আবার কিছু গ্রাহক অবৈধ আয় (আয়কর রিটার্নে দেখানো হয় না) দিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন। তাই তারা কম দামে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করেন।

বিজ্ঞাপন

দুদকের নথিপত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেনজীর আহমেদের পরিবার ২০২৩ সালের ৫ মার্চ গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চারটি দলিলে ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট (বর্গফুট) ফ্ল্যাট কেনেন।

আদালতে উপস্থাপিত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেনজীর রহমান ও তার পরিবার গুলশান আবাসিক এলাকার সিইসি (জি) ব্লকের ১৩৪ নম্বর প্লটে (পুরাতন নম্বর ১৩০ নম্বর) দুটি বেজমেন্টসহ নির্মিত র‌্যাংকন আইকন টাওয়ারের চারটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।

এর মধ্যে ১২/এ, ১২/বি এবং ১৩/এ এই তিনটি ফ্ল্যাট সাভানাহ ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে এবং এর চেয়ারম্যান জিশান মির্জা এই কোম্পানির পক্ষে দলিলে সই করেন।

র‌্যাংকন আইকন টাওয়ারের ১৩/বি ফ্ল্যাটটি কেনা হয়েছে বেনজীর আহমেদের নাবালিকা কন্যা জাহরা জেরিন বিনতে বেনজীরের নামে। জাহরা জেরিন বিনতে বেনজিরের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন বেনজীর আহমেদ।

দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে জিশান মির্জা যে ১২/এ ফ্ল্যাটটি কিনেছেন তার দাম দেখানো হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। ১২/বি ফ্ল্যাটের দাম দেখানো হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা এবং ১৩/এ ফ্ল্যাটের দাম দেখানো হয়েছে সাড়ে ৫৩ লাখ টাকা। এছাড়া ১৩/বি ফ্ল্যাটের দামও সাড়ে ৫৩ লাভ টাকা দেখানো হয়েছে।

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ মে ঢাকার একটি আদালত তার ৮৩টি দলিলে উল্লিখিত সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন।

এছাড়াও, ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আর্থিক লেনদেনকারী মোট ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

এদিকে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ৬ জুন বেনজীরকে এবং ৯ জুন স্ত্রী ও সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission