• ঢাকা রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১
logo

মন্ত্রীদের বেডরুমে ঢুকে যেতেন মতিউর, ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধানের কাছের

আরটিভি নিউজ

  ২৬ জুন ২০২৪, ২০:০৮
ফাইল ছবি

কোরবানি উপলক্ষে ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনে মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ আলোচনায় আসেন। এরপর তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমানের পরিচয় প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু, যা এখনও থামছে না। একের পর এক বেরিয়ে আসছে মতিউর রহমানের অবৈধ সম্পদ। এবার প্রকাশ্যে এসেছে বিএনপি পরিবার থেকে উঠে আসা ক্ষমতাধর মতিউরের নতুন তথ্য।

এই মতিউর কতটা ক্ষমতাধর ছিলেন তা বোঝা গেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান শেখ বদিউর রহমানের কথাতে।

তিনি জানান, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়া এবং বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বেডরুমে প্রবেশের অনুমতি ছিল তার। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালে তার বদলি ঠেকাতে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ পর্যন্ত বদিউর রহমানকে ফোন করে তদবির করেছিলেন।

তিনি জানান, ২০০৭ সালে এনবিআরের চেয়ারম্যান হওয়ার পর মতিউরকে চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে সরিয়ে রাজশাহীতে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। তবে তৎকালীন চার বোর্ড মেম্বার তৎক্ষণাৎ এই আদেশ বদলাতে বলেন। তৎকালীন রাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চপর্যায় থেকে ফোন আসতে শুরু করে বদিউর রহমানের কাছে।

ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা মতিউরের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তবে সেখানে মতিউর রহমান নামে কেউ তাকে চেনেন না। তাকে গ্রামের মানুষ পিন্টু নামে চেনেন। গ্রামবাসী বিশ্বাস করতে পারছেন না পিন্টুর এত সম্পদ আছে। সদ্য সাবেক এই রাজস্ব কর্মকর্তার সম্পদের পাহাড় ও দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে গ্রামের মানুষ হতবাক।

জানা গেছে, নিজ এলাকায় তেমন পদচারণা না থাক‌লেও সেখা‌নে বেশ প্রভাবশালী ছিলেন তি‌নি, একইসঙ্গে ছিলেন সম্মানিত ব্যক্তি। গ্রামের বাড়িতে নিজের তেমন সম্পদ না থাকলেও স্বজনদের রয়েছে অঢেল সম্পদ। পরিবারের অন্য সবার ভাগ্য খুলেছে মতিউর রহমান ওর‌ফে পিন্টুর হাত ধরেই। তিনি রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়ার পর ফুলে ফেঁপে উঠেছে অন্য সবার ভাগ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলজীবন থেকেই মেধাবী ছিলেন মতিউর। পড়াশোনা করেছেন বাবুগঞ্জে খালার বাড়িতে থেকে। পরিবারে ৩ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। আর মতিউরের বাবা আব্দুল হাকিম হাওলাদার পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাকে সবাই সৎ ব্যক্তি হিসাবেই চিনতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মতিউর রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত পরিবারে তেমন সচ্ছলতা ছিল না। খুব বেশি ছিল না গ্রামে তার বাবা হাকিম হাওলাদারের জায়গা-জমির পরিমাণও। রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের উত্থানের পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে এই পরিবারের অর্থবিত্তের চিত্র।

এ সময় বিত্তশালী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন তার মেজ ভাই কাইয়ুম হাওলাদার। ভাইয়ের মতো কাইয়ুমও এরই মধ্যে হয়েছেন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। মুলাদী পৌর শহরে থানার উত্তর পাশে তার আলিশান বাড়ি রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, ভাই মতিউরের কারণেই ঢাকার টঙ্গী এলাকায় ট্রাভেল ব্যাগ তৈরির কারখানা করেন কাইয়ুম। এ ছাড়া এই পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে অনেক জমিও রয়েছে। যে সকল সম্পদের ব্যবহার মতিউরের স্বজনরা করলেও প্রকৃত মালিক কে, তা নিশ্চিত নন তারা।

জানা গেছে, মতিউরের বাবা শিক্ষকতার চাকরি থেকে অবসরের পর ২০০৩ সালে কাজিরচর ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। তিনি কাজিরচর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি তৎকালীন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমানে মুলাদী উপজেলা ১৪ দলের সমন্বয়ক ইউসুফ আলীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আবার ওয়ান-ইলেভেনের সময় চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষ হলেও নানা উপায়ে আরও প্রায় চার বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন হাকিম।

বাহাদুরপুর গ্রামের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাবাকে চেয়ারম্যান বানাতে প্রচুর টাকা খরচ করেছিলেন মতিউর। তখন মতিউর ছাড়া অন্য ভাইয়েরা স্বাবলম্বী ছিলেন না। আর ওই নির্বাচনের মাধ্যমে নিজের অবস্থার জানান দেন মতিউর। সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ায় ঢাকায় গাড়ি-বাড়ি আছে এটাই ভাবতো এলাকাবাসী। তবে সে যে এত সম্পদের মালিক তা ভাবতেও পারেনি কেউ। তার দ্বিতীয় বিয়ের কথা এলাকায় কেউই জানতো না বলে জানিয়েছেন বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দারা।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মুলাদীর এক জনপ্রতিনিধি বলেন, বিএনপি শাসনামলে এক মন্ত্রীর পরিবারের ঘনিষ্টজন ছিলেন মতিউর। আর রাজস্ব ক্যাডারে যাওয়ার আগে ১১তম বিসিএসে ট্রেড ক্যাডারে চাকরি হয়েছিল তার। ট্রেড ক্যাডার বিলুপ্ত হলে পছন্দ অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডারে যাওয়ার সুযোগ পান ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আর রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের যোগদানের পর এই পরিবারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত না থাকলেও বাবার পুরোনো ঘরের জায়গায় দৃষ্টিনন্দন আলিশান বাড়িসহ আশপাশে দৃষ্টিনন্দন নানান স্থাপনা রয়েছে সদ্য সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তার পরিবারের।

এদিকে মতিউরের পরিবারের সদস্যদের দাবি, সব কিছুই ষড়যন্ত্র। মানুষ মানুষের ভালো সহ্য করতে পারে না। ঈর্ষান্বিত হয়ে শত্রুতা করে। সে জন্যই মতিউর রহমানের মতো একজন ভালো মানুষকে নিয়ে এত টানাহেঁচড়া চলছে।

জানা গেছে, আলোচনায় আসার আগে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রচণ্ড ক্ষমতার দাপট ছিল। সরকারি নানান দপ্তরকে কাজে লাগিয়ে নিজ বাড়ির আশপাশের এলাকার চিত্র পাল্টেছেন। বাড়ির সামনে খালের ওপরে করেছেন পাকা সেতু। বাড়িতে ঢুকতে একপাশে তিনতলা মাদ্রাসা, আরেক পাশে দোতলা মসজিদ। ভেতরে পিন্টুর দোতলা বাড়ি।

আবার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগিতায় নিজ গ্রামের বাড়ি ঘিরে বিভিন্ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। বাড়ির সামনে দি‌য়ে এঁকে‌বেঁ‌কে ব‌য়ে যাওয়া খালের দুই পাড় সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা, দুই পাশেই রয়েছে পাকা সড়ক। খা‌লের দুই পাড়ের প্রতিটি বাড়ির সামনে সান বাঁধানো ঘাট করে দেওয়া হয়েছে।

বাড়ির দক্ষিণ দিকে রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তার পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে তিনতলা একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। গড়ে তোলা হয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, ক্লিনিকের মতো প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে হাওলাদার ফাউন্ডেশন।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করলেন নিহত তানজিমের বাবা-মা
১৮ দিনে অনলাইনে ৩৪ হাজার আয়কর রিটার্ন দাখিল: এনবিআর
সেনাপ্রধানের কুমিল্লা এরিয়া পরিদর্শন
পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গুজব নিয়ে সতর্ক করলেন সেনাপ্রধান