শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী—ট্রাম্পের নামে প্রচারিত ভাইরাল উক্তিটি ভুয়া
এখনও শেখ হাসিনাকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—সম্প্রতি এমন একটি উক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটিতে সূত্র হিসেবে কমেন্টবক্সে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘ন্যাশনাল ডায়ালগস’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওর লিংক।
আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য দাবি করে এমন একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে লেখা, ‘আমি মনে করি শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: পিবিডি ব্রডকাস্টকে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কথা বলেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অবৈধ দখলদার সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যারা বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, তারা আমাকে পদত্যাগপত্রটি দেখান।’
পোস্টটিতে আরও লেখা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশ–পাকিস্তানে কি হচ্ছে আমি সব জানি। এখানে সন্ত্রাসবাদের চাষাবাদ হচ্ছে।’
নুরুল আজিম রনি তার পোস্টটির সূত্র হিসেবে কমেন্টবক্সে যে ‘ন্যাশনাল ডায়ালগস’ নামের ইউটিউব চ্যানেলের লিংক দিয়েছেন, সেটি ভারতীয় একটি ইউটিউব চ্যানেল। তরুণ ঘোষ নামে কলকাতার একজন সাংবাদিক এই চ্যানেলে নিয়মিত তার নিজের মতামত ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন। শনিবার চ্যানেলটিতে প্রচারিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘আমি মানি হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী: ট্রাম্প’।
ভিডিওটিতে তরুণ ঘোষ দাবি করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প জেতার পর গতকাল শনিবার একটি পডকাস্টে যোগ দিয়েছিলেন। পিবিডি পডকাস্ট নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এটি আয়োজন করা হয়। পডকাস্টে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প। পডকাস্টটিতে কিছু কিছু ব্যক্তিকে ট্রাম্প শত্রুর তালিকায় রেখেছেন। এ তালিকায় এক নম্বরে আছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, এরপরই থাকবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনস্কি...।
তরুণ ঘোষ আরও দাবি করেন, ট্রাম্প পডকাস্টে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, এখানে স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছে এবং এখানে সন্ত্রাসবাদের একটা বীজ বোনা হচ্ছে।
এরপর ভিডিওটিতে তরুণ ঘোষ নিজের আরও বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন।
তবে, ফ্যাক্টচেক অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিবিডি পডকাস্টে অংশ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি। তাছাড়া, পডকাস্টটিতে তিনি অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে নয়।
প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে পিবিডি পডকাস্টের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে ট্রাম্পের পডকাস্টটি পাওয়া যায়। চ্যানেলটিতে গত ১৭ অক্টোবর পডকাস্টটি প্রচার করা হয়। ১ ঘণ্টা ২৬ মিনিটের পডকাস্টটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বারাক ওবামার ভূমিকা, কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা, ইরানের ওপর অবরোধ, পররাষ্ট্র নীতি ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন ট্রাম্প।
পডকাস্টটিতে পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কিত আলোচনায় ট্রাম্প জানান, তার সঙ্গে পুতিন ও জেলনস্কির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন।
পুরো পডকাস্টটিতে তাকে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো আলোচনা করতে শোনা যায়নি। এমনকি, নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে টুইটটি ছাড়া ট্রাম্প বাংলাদেশ বা শেখ হাসিনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন বলে কোনো তথ্যও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যম সূত্রে পাওয়া যায়নি।
এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) গত ৩১ অক্টোবর একটি টুইট করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদেরওপর ‘বর্বর’ সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন। এসবের নিন্দা জানিয়ে টুইটটিতে তিনি লিখেন, বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ “বিশৃঙ্খল” অবস্থার মাঝে রয়েছে।
এ অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশে এখন অন্যতম এক আলোচনার বিষয় সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেমন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ট্রাম্পকে অভিনন্দ জানিয়েছেন জুলাই বিপ্লবে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
এসবের মাঝেই সবশেষ শেখ হাসিনাকেই এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন ট্রাম্প—এমন খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশ।
আরটিভি/এসএইচএম/এআর
মন্তব্য করুন