• ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
logo

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাবে নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে: টিআইবি

আরটিভি নিউজ

  ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৫৪

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক বিকাশ ও প্রভাব দৃশ্যমান। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের কারণে জেন্ডার, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। যা বৈষম্যবিরোধী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া কোনো কোনো মহলের অতিক্ষমতায়ন ও তার অপব্যবহার এবং চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। যা অসাম্প্রদায়িক সম-অধিকারভিত্তিক ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের অন্তরায়।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি মাইডাস সেন্টারে ‘নতুন বাংলাদেশ: কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন–পরবর্তী ১০০ দিন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এসব কথা বলে টিআইবি। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় একদিকে রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক এবং সামাজিক বন্দোবন্তের মাধ্যমে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার বহুমাত্রিক ভিত্তি ও অংশীজনের ভূমিকা রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে সরকারের চলার পথে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব বাস্তবায়নে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কৌশল ও রোডম্যাপ প্রণয়নের সুযোগ নেওয়া হয়নি, যা এখনও অনুপস্থিত।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরও প্রতিটি ক্ষেত্রে দখল ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি এখনো চলমান রয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা ও ৮টি জাতীয় দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে নিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় জড়িতদের বিচার শুরু হয়েছে, তবে হতাহতদের সংখ্যা নিয়ে তারতম্য দেখা গেছে। এ ছাড়া একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও দলীয়করণের পরিবর্তে আরেকটি গোষ্ঠীর প্রতিস্থাপন হয়েছে বলেও লক্ষ করা যায়।

শীর্ষ সন্ত্রসীদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাবেক সরকারের সময় দায়ের করা মামলা ও রায় থেকে অব্যাহতি এবং দণ্ড মওকুফের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত সহিংসতার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এই প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। প্রশাসন পরিচালনায় সরকারের দক্ষতা ও কর্মপরিকল্পনার ঘাটতি লক্ষ করা যায়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারে দায়িত্বশীলদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের পুরোনো ধারা বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন-গ্রেপ্তারসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আদালতে আক্রমণের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রলীগ নেত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে লাঞ্ছিত হয়েছেন, সাবেক বিচারপতির ওপর আক্রমণ এবং আসামি পক্ষের আইনজীবীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের পক্ষ থেকে সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার প্রশ্নে ধৈর্যের ঘাটতি লক্ষণীয়। গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও হুমকি-হামলাসহ কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার তৎপরতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন না করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়োগকৃত বিচারক ও কৌঁসুলিদের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা, নিয়োগপ্রাপ্তদের অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি।

টিআইবির গবেষণায় আরও বলা হয়, ভারত কর্তৃক কর্তৃত্ববাদ পতনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকারে ব্যর্থতা ও তার কারণে অপতৎপরতার ফলে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েনে সরকার ও দেশের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মনোভাব ইতিবাচক হলেও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক সহায়তা, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ এর মতো সংস্থার ঋণ সহায়তা-সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী, বিশেষ করে ইতোমধ্যে সুদসহ ঋণ পরিশোধের অতিরিক্ত দায় সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে বলে জানায় টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নতুন বাংলাদেশে দুটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। তার একটি হলো রাষ্ট্র সংস্কার, আরেকটি হলো নতুন রাজনৈতিক সামাজিক সমঝোতা। এই লক্ষ্যগুলোকে সামনে রেখেই অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। সরকারের কাজ কোথায় কী হচ্ছে, সেইগুলো চিহ্নিত করাও আমাদের দায়িত্ব। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকি। ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করি।

আরটিভি/কেএইচ/এস

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
স্বাধীনতার পর থেকে সব ধর্মের মানুষ বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছে: জামায়াত আমির
দেশ কোনো দলের কাছে ইজারা দেওয়া হয়নি: ধর্ম উপদেষ্টা
হজযাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সময়সীমা বেঁধে দিল ধর্ম মন্ত্রণালয়
হজ প্যাকেজের বাকি টাকা জমা দিতে সময় নির্ধারণ