নিজের সম্পদের বিবরণী তুলে ধরলেন দুদক চেয়ারম্যান
নিজের আয়-ব্যয় ও সম্পদের ফিরিস্তি দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমার সম্পদ বিবরণী দুদক সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। অন্য কমিশনাররা তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দিয়ে দেবেন।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজের সম্পদ সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বসিলায় সাড়ে ৭০০ স্কয়ার ফিটের দুটি মিলিয়ে ১৫শ’ স্কয়ার ফিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সেখানে আরও ৭০০ স্কয়ার ফিট নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে আমার একটি খালি জায়গা আছে পাঁচ কাঠা। বিসিএস প্রশাসন কমিটির সদস্য ছিলাম। সেখানে আটজন সদস্যের জন্য ১০ কাঠা জমি আছে। আমার ভাগে ১ দশমিক ২৫ কাঠা পড়বে। ২০০৭ সালে টাকা-পয়সা দিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত দখল পাইনি। রাজউকের একটি প্লটের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত সেটির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। যেকোনো কারণে হোক সরকার আমাকে দেয়নি। আমি আবার আবেদন করব। এর বাইরে আমার আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে আবদুল মোমেন বলেন, বিভিন্ন আকারের ২৫টি সেলফ ভর্তি বইপত্র আছে। অনেক দামি বইপত্র আছে। আসবাবপত্র ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে পাঁচ লাখ টাকার জিনিস আছে। পাঁচ বছর মেয়াদি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। আর তিন মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র আছে ২০ লাখ টাকার। আমার জিপিএফের টাকা আমি তুলি নাই, ওখানে ১৭ লাখ টাকা আছে।
নিজের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমার চাকরিলব্ধ আয়- উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ। শিক্ষকতা করি, বক্তৃতা করি, লেখালেখি করি। সাড়ে পাঁচ শতক একটা জমি কিনেছিলাম বেড়িবাঁধের বাইরে, সেটি বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। আমার চাকরিজীবন অনেক দিনের। ছাত্রাবস্থা থেকেই আয় করা শুরু করি। যখন এই চাকরি থেকে চলে যাব আপনারা হিসাব করবেন এই সম্পদ কতটা বাড়লো, কতটা কমলো।
আমাদের সৌভাগ্য আমরা এমন সময় এসেছি যখন রাজনৈতিক সরকার নেই মন্তব্য করে আবদুল মোমেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণপ্রত্যাশাকে লালন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ এই সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে, ৫ আগস্টের বিপ্লব না হলে আমরা এখানে আসতাম না।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি যে একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বায়তুল মোকাররমের ইমাম পালিয়েছেন উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটি একটি অদ্ভূত ঘটনা। অনেক দেশেই আন্দোলন হয়েছে, রাষ্ট্রপ্রধান পালিয়ে গেছেন, প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন। কিন্তু পোপ বা মন্দিরের পুরোহিত পালিয়ে গেছেন, এমনটি ঘটেনি। এ রকম অবিশ্বাস্য ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে।
দুর্নীতিবাজরা নানা কারণে ছাড় পেয়ে যায় জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, দুর্নীতিবাজদের যেন ছাড় দেওয়া না হয় এটি আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনেক সময়ই নানা কারণে সফলকাম হয় না। হয় তো আমরা যে মামলা করি, সেই মামলাটি দুর্বল। কিংবা এখানে বসে বিচার বিভাগের সমালোচনা করা সমীচীন না। কিন্তু সেই প্রশ্ন আমরা কেউ কেউ তুলে থাকি যে; সুবিচার কী হলো? সুবিচারের দায় শুধু দুদকের এটি মনে করলে হবে না।
প্রসঙ্গত, দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার একদিন পরই গত ১১ ডিসেম্বর কর্মস্থলে যোগ দেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। ওইদিন সাতদিনের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ওইদিনই দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আরটিভি/কেএইচ
মন্তব্য করুন