রয়টার্সের প্রতিবেদন

বাংলাদেশিদের মেডিকেল ভিসা দিচ্ছে না ভারত, সুযোগ নিচ্ছে চীন

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ , ০৩:৪৮ পিএম


বাংলাদেশিদের মেডিকেল ভিসা দিচ্ছে না ভারত, সুযোগ নিচ্ছে চীন

বাংলাদেশিদের চাহিদা অনুযায়ী মেডিকেল ভিসা দিচ্ছে না ভারত। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে চীন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে আসছে চীন। দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য নতুন চিকিৎসা সুবিধার প্রস্তাব দিচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ইস্যু করা ভিসার অধিকাংশই ছিল সাশ্রয়ী বেসরকারি চিকিৎসার জন্য। এটি প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত রাখতে এবং অঞ্চলে চীনের প্রভাব সীমিত রাখতে ভূমিকা রেখেছিল।

এ বিষয়ে চার বাংলাদেশি সূত্রের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, শূন্যতা থাকলে কেউ না কেউ এসে সেটা পূরণ করবেই। কিছু মানুষ এখন থাইল্যান্ড ও চীনে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। গত বছরের আগস্ট থেকে ভারত প্রতিদিন এক হাজারেরও কম বাংলাদেশিকে চিকিৎসা ভিসা দিচ্ছে, যেখানে আগে এই সংখ্যা ছিল দৈনিক ৫ থেকে ৭ হাজার।

বিজ্ঞাপন

ভিসার সংখ্যা কমেছে মূলত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্র শেখ হাসিনার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে চলে যান। এরপর বাংলাদেশ তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফেরত চাইলেও ভারত বাংলাদেশের অনুরোধ উপেক্ষা করছে।

এর আগে, ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ২০ লাখেরও বেশি ভিসা ইস্যু করেছিল, যার বেশির ভাগই চিকিৎসা ভিসা ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভারতের নিষ্ক্রিয়তার কারণে চীনের জন্য এক আকর্ষণীয় সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ মাসের শুরুতেই একদল বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশ সফর করেছে। চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এটিকে, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা পর্যটন বাজারের সম্ভাবনা অন্বেষণের’ উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এ ছাড়া, অন্তত ১৪টি চীনা প্রতিষ্ঠান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশে ২৩ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে, যা এই সময়ে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের কার্যত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ড. ইউনূস চলতি মাসেই চীন সফরে যাচ্ছেন এবং প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা আছে।

বিজ্ঞাপন

ভারতের সঙ্গে ২০২০ সালের হিমালয় সীমান্ত সংঘর্ষের পর সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করলেও, চীন এখন ঢাকায় একটি ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি, বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসা গ্রহণের প্রক্রিয়াও সহজ করছে বেইজিং।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে চীন পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সহযোগিতাকে ক্রমাগত গভীর করতে এবং নতুন সুযোগ অন্বেষণ করতে ইচ্ছুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে নয় এবং তৃতীয় পক্ষের কারণে প্রভাবিতও হবে না।’ এ বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।

চারটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের ভিসা প্রক্রিয়ার ধীর গতি শুধু বাংলাদেশের সরকারের নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ফলে ঢাকার সমর্থন দীর্ঘ সময়ের জন্য হারানোর আশঙ্কা আছে দিল্লির, বিশেষ করে শেখ হাসিনার দল দ্রুত ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকায়।

ভিসা না দেওয়ার কারণ হিসেবে, ভারত বারবার ঢাকায় তাদের দূতাবাসে কর্মী সংকটের কারণ দেখিয়েছে। ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা চায়, বাংলাদেশি রোগীরা ভারতে চিকিৎসার সুযোগ পাক, তবে বাংলাদেশে ‘স্থিতিশীলতা’ ফিরে আসার পরই ভিসা অফিসে কর্মী বাড়ানো হবে। এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসা ভিসার সংখ্যা কমানোর আরেকটি কারণ হলো, কিছু ক্ষেত্রে এগুলোর অপব্যবহার হচ্ছিল। কিছু লোক এসব ভিসার মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের কঠিন পরিস্থিতি থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।’

বাংলাদেশে ভারতের ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, ভারতের এই ভিসা জটিলতা এমনই এক সময়ে তৈরি হয়েছে। 

এ মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের কিছু প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং উভয় দেশ যৌথভাবে ‘প্রকল্প পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যাস’ নিয়ে আলোচনা করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।

ভারত এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেনি, তবে চীনের আমন্ত্রণে সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এক সাবেক মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বেইজিং সফর করেছে।

এই সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টা  ড. ইউনূস চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ তার বাজার চীনের জন্য আরও উন্মুক্ত করতে প্রস্তুত। চীনা সৌরশক্তি প্রতিষ্ঠান লুঙ্গি গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশে অফিস স্থাপন ও উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে।

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হ্যাপিমন জেকব বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরিবর্তন চলছে, যেখানে চীন প্রধান শক্তিগুলোর একটিতে পরিণত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি দক্ষিণ এশীয় দেশে ভারতের ঐতিহ্যগত প্রভাব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।’

আরটিভি/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission