• ঢাকা শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১
logo

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আরেক হারুনের আবির্ভাব

আরটিভি নিউজ

  ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৭
ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হারুন
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের ‘রাফ অ্যান্ড ট্যাফ’ খ্যাত পুলিশ অফিসার হারুনের নাম সবার মুখে মুখে ছিল। শেখ হাসিনার ক্ষমতা ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে সেই হারুন লাপাত্তা হয়ে যান। তবে তার নামে আরেক হারুনের সাক্ষাৎ পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।

তিনি হলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) সাবেক সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিকস সার্জারি) ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হারুন।

শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তাকে নিটোর থেকে গত ২৭ অক্টোবর বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। বদলির প্রজ্ঞাপনে তাকে অনতিবিলম্বে বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্বভার হস্তান্তরপূর্বক পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। অন্যথায় ২৮ অক্টোবর অপরাহ্নে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন।

অথচ বদলির আদেশের আজ (৮ নভেম্বর) ১২ দিন পার হলেও তিনি এখনও তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। উল্টো তার পূর্বতন কর্মস্থল নিটোরে এসে সহকর্মী চিকিৎসকসহ হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ২৭ অক্টোবরের এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ আদেশ জারি করা হল। তিনি অনতিবিলম্বে বর্তমান কর্মস্থল এর দায়িত্বভার হস্তান্তরপূর্বক পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় ২৮/১০/ ২০২৪ তারিখ অপরাহ্ণে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন। অবমুক্তির সময় তিনি বর্তমান কর্মস্থল হতে আবশ্যিকভাবে ছাড়পত্র গ্রহণ করবেন এবং এইচআরএস ডাটাবেজ থেকে মুভ আউট হবেন এবং যোগদানের পর ন্যস্তকৃত বিভাগে/কর্মস্থলে মুভ ইন হবেন।’

বদলির বিষয়টি স্বীকার করে ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হারুন বলেন, আমি নিটোরের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলায় আমাকে ষড়যন্ত্র করে বদলি করা হয়েছে। আমি বদলির আদেশ বাতিল করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। দেখি মন্ত্রণালয় কী করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা আহত হয়ে নিটোরে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি আছেন তাদের সবশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে গত ১৫ অক্টোবর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সেখানে যান। সেসময় সিনিয়র ডাক্তার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ডা. ইউসুফ হারুন উপদেষ্টার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেন। উচ্চস্বরে গালিগালাজ শুরু করেন। বিষয়টি পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নজরে আসে।

এই ঘটনার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. সামিউল মাসুদ গত ১৭ অক্টোবর দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, মাননীয় উপদেষ্টা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেন ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হারুনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং কারো ব্যক্তিগত পরিচয়ের সুবাদেও এহেন আচরণের কোন সুযোগ নেই। তিনি কর্তৃপক্ষকেও আরও আশ্বস্ত করেন, তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন যাতে উক্ত চিকিৎসকের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই চিঠির পর গত ২৭ অক্টোবর ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হারুনকে নিটোর থেকে বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়।

এর পর থেকেই ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হারুনের আসল চেহারা ফুটে ওঠে। নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে পরিচালকের সঙ্গে অশোভন আচরণ শুরু করেন। গত সোমবার হাসপাতালের দোতলায় ডাক্তার ক্যান্টিনে গিয়ে সিনিয়র প্রফেসর ডা. ফারুক কাশেম, সহকারী অধ্যাপক ডা. সামসুল আলমসহ অনেকের সঙ্গেই অশোভন আচরণ করেন ডা. হারুন।

তাদের অভিযোগ ডা. হারুন বহিরাগতদের নিয়ে এসে পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা হুমকি-ধমকি দেন।

এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা আনসার কমান্ডার আব্দুর রউফ বলেন, তিনি (ডা. হারুন) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। কয়েকদিন আগে জরুরি বিভাগের সামনে পরিচালক স্যার ও সামসুল আলম স্যারকে গালাগালি করেছেন। এমনকি ভাঙচুর ও অফিসে তালা মারার জন্য বহিরাগতদের নিয়ে আসেন। আমরা বাধা দিলে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। উনিতো ওনার সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেই খারাপ আচরণ করেন, আমরা তো সামান্য নিরাপত্তাকর্মী। আমরা নিরুপায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিটোরের এক সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসক বলেন, সে (ডা. হারুন) যে ধরনের কাজ করছে সেটা পাগলামির পর্যায়ে চলে গেছে। এটা কোনো সুস্থ মানুষ করতে পারে না। তাঁর আচরণের কারণে কিন্তু পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেটারও গুরুত্ব সে বুঝছে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল দাবি করে তিনি আরও বলেন, একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবিও আছে। দুই বার পদোন্নতিও পেয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর তিনি আমূল পাল্টে যান।

ডা. ইউসুফ হারুন শাস্তিমূলক বদলি থেকে বাঁচতে প্রথমে নিজেকে জামায়াতপন্থী এবং পরবর্তীতে বিএনপিপন্থী চিকিৎসক বলেও পরিচয় দেন। তবে, উভয় দলের চিকিৎসক নেতারা তাকে ‘নিজ দলের কর্মী নয়’ বলে দাবি করেন।

ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সভাপতি ডা. জহিরুল ইসলাম, ডা. হারুনের আসলে হঠাৎ করে কী হলো বুঝতে পারছি না। হয়তো তার মানসিক কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে, নয়তো কারও উস্কানিতে তিনি এমনটা করছেন। শুনছি প্রথমে তিনি নিজেকে এনডিএফের পরিচয় দিয়ে ক্ষমতা জাহির করতেন। তখন ড্যাবের নেতাকর্মীরা আমাদেরকে ব্যবস্থা নেওয়ার চাপ দিলে পরে দেখি তিনি আমাদের কেউ নন। তখন বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেকে ড্যাবের কর্মী বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন। যদিও ড্যাবের নেতারা তার দায়িত্ব নিতে রাজি হননি।

ডা. জহিরুল ইসলাম আরও বলেন, তাকে ইতোমধ্যে নিটোর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। গতকালই তাকে এক ঘণ্টার নোটিশ দিয়ে রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপরও তিনি বারবার সবাইকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বলছেন যে, আগামী ২০/২৫ দিনের মধ্যে তিনি আবার ফিরে আসবেন এবং বাকিদের দেখে নেবেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নিটোরের যুগ্ম পরিচালক ডা. মোজাফফর হোসেন বলেন, আমার সঙ্গে সে কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি। কিন্তু পরিচালকসহ অন্য অনেকের সঙ্গে কেন যে এমন দুর্ব্যবহার করছেন জানি না। স্টাফদের সঙ্গে তাঁর এই দুর্ব্যবহারের কারণে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী শামীমউজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমিও বিব্রত। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বিষয়টি নিজ চোখে দেখেছেন। তারপর উনার দপ্তর থেকে দেওয়া চিঠিটাই সবকিছু খুলে দিয়েছে।

পরিচালক আরও বলেন, বদলির আদেশ পালন না করে সে উলটো হাসপাতালে এসে চিকিৎসাসেবার পরিবেশ নষ্ট করছে। সে যেন প্রশাসনের ভেতরে আরেকটি প্রশাসন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ডা. হারুনকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করেন ডা. কাজী শামীমউজ্জামান।

বরগুনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম নজমূল আহসান বলেন, ডা. ইউসুফ হারুনকে বরগুনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি করে গত ২৭ অক্টোবর অর্ডার জারি করা হয়েছে। তবে, ১২ দিনেও তিনি আমার হাসপাতালে যোগদান করেননি। এমনকি কোনো কারণে তার যোগদানে বিলম্ব হবে কি না, বা কবে নাগাদ তিনি আসবেন, নাকি আদৌ আসবেন কি না, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

তিনি বলেন, শুনেছি ডা. ইউসুফ হারুন সাহেব এখানে আসতে চাচ্ছেন না। এখন মন্ত্রণালয়ের অর্ডার হওয়ার পরও যদি কেউ আসতে না চান, তাহলে তো তার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।

আরটিভি/এএইচ/এআর

মন্তব্য করুন

rtv Drama
Radhuni
  • রাজধানী এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ জানা গেল
ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৭ জনের মৃত্যু
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা