উৎকোচ না দেয়ায় বদলির অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে শিক্ষক বদলির অভিযোগ পাওয়া গেছে শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম ও পাঁচবিবি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলার সদ্য জাতীয়করণকৃত দোঘড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানাকে তার বাড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের আরেকটি সদ্য জাতীয়করণকৃত মোলান রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ফারজানা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম ও পাঁচবিবি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে এই বদলির আদেশ দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দোঘড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আমার বাড়ির কাছেই। যে কারণে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও স্কুলটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারছি। কিন্তু আমার মতো একজন নারী শিক্ষকের পক্ষে ২৫ কিলোমিটার দূরের স্কুলে গিয়ে সেভাবে কাজ করা খুবই কঠিন হবে।’
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের সদ্য জাতীয়করণকৃত স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন সদ্য জাতীয়করণকৃত স্কুলের শিক্ষকরা। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল সরকার মামলাধীন বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ করতে নিষেধাজ্ঞা দেন।
পরে একই বছরের ১৫ মে সরকার ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করলে ২০১৮ সালের ১২ জুন পাঁচবিবি উপজেলায় ৩২ জনসহ জেলায় মোট ১১২ জন পুরাতন সরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসাবে ফারজানাকে দোঘড়া বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে গেল ২৪ মাস ধরে তিনি যথারীতি ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
কিন্ত ২০১৯ সালের ছয় অক্টোবর যে সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদের বিপরীতে আদালতে মামলা চলমান আছে সেইসব প্রতিষ্ঠানে প্রধানশিক্ষক হিসেবে পদায়ন না করতে সরকার পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রে যোগদানকৃত প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলির কথা উল্লেখ নেই। এরপরও প্রধান শিক্ষক ফারজানাকে বদলি করা হয়।
এক্ষেত্রে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌফিকুজ্জামান স্বপদে কর্মরত থাকলেও তাকে না জানিয়ে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার সেজে ফারজানাকে বদলি করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেন।
সহকারী শিক্ষা অফিসারের এমন নিয়ম বহির্ভূত কাজে পাচঁববি উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলমও সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করেন ফারজানা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাঁচবিবি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম আরটিভি নিউজকে বলেন, বদলি করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু প্রস্তাবনা দিয়েছি। শিক্ষিকার সুবিধামতো স্কুলেই তাকে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের আইন বিভাগের পরামর্শের ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী আব্দুল হাকিম আরটিভি নিউজকে জানান, প্রধান শিক্ষক ফারজানার বদলি ইচ্ছাগতভাবে সাইফুল স্যার করেছেন। যা তিনি পারেন না।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক কোনও ব্যাপার এখানে নেই। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে বদলির প্রক্রিয়াটি একটি নিয়মিত চিঠি হিসেবে দিয়েছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান আরটিভি নিউজকে জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে আরটিভি নিউজকে জানান, আমার কাছে যে প্রস্তাবনা আসে তার মধ্যে শিক্ষিকার আবেদনও ছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে শূন্যপদে বদলি করা হয়।
জয়পুরহাট জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল আরটিভি নিউজকে বলেন, মামলা চলমান থাকা অবস্থায় বদলি করা আদালতকে অবমাননা করা। এ কাজ যেই করবে আদালত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম জানান, সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা যদি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পান তারপরও তিনি শুধু রুটিন ওয়ার্ক করতে পারেন মাত্র। এ ধরনের বদলি প্রক্রিয়ার কোনও কাগজে স্বাক্ষর করতে পারেন না।
জেবি
মন্তব্য করুন