টেকনাফে পাহাড় ধসে পাঁচ ভাই-বোনের মৃত্যু

সন্তানদের ভালো মানুষ করার স্বপ্ন পূরণ হলো না বাবার 

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১ , ০৩:১৮ পিএম


সন্তানদের ভালো মানুষ করার স্বপ্ন পূরণ হলো না বাবার 
স্বপ্ন পূরণ হলো না বাবার 

প্রকৃতির সৌন্দর্যকে প্রাণ মেলায় সাজিয়ে রাখে পাহাড়। কিন্তু এই দৃশ্য হয়তো সবসময় স্বাভাবিক থাকে না পাহাড়ের বুকে। সবুজ পাহাড় নির্মমভাবে মাটি চাপা দিয়ে একই পরিবারের পাঁচ ভাই-বোনের জীবন কেড়ে নিলো।

বিজ্ঞাপন

টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পানখালি ভিলেজার পাড়া এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে ছৈয়দ আলম (৫০)। পেশায় কৃষক। তার ৭ ছেলে-মেয়ে। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন অন্যত্র। বাকী ৬ ছেলে-মেয়ে স্ত্রী রেহেনা বেগমসহ (৪০) বিশাল পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেছিলেন। তার বড় ছেলে আব্দু শুক্কুর (১৮) পড়ালেখা না করলেও পিতাপুত্র মিলে কৃষি কাজ করে বাকি ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা করিয়ে ভালো মানুষ করবেন এমন প্রত্যাশা ছিল তার।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দাঁড়িয়ে থাকা পাশের পিরামিডের মতো পাহাড়ের বিশাল খণ্ড এসে ৫ ছেলে মেয়েদের চেপে ধরে নির্মমভাবে খুন করে। সেই সঙ্গে খুন করা হয় তার স্বপ্নকে। এসব কথা হয় ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসে আহত ছৈয়দ আলমের সঙ্গে। শুধু তিনি নন মাটির ভেতর থেকে তার স্ত্রী রেহেনা বেগম ও দুগ্ধ শিশু মরিয়মকেও উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গত ২৮ জুলাই রাত ২টার দিকে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে তার পরিবারের ৫ ছেলে মেয়ে মারা যান। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ছৈয়দ আলম তার স্ত্রী ৮ মাসের কন্যা শিশু।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার টেকনাফ প্রধান সড়কের হ্নীলা বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে পাহাড়ের পাদদেশে ছৈয়দ আলমের ধুমড়ে মুচরে পড়া বাড়ি। চারিদিকে বেড়া ওপরে টিনের চাল। কিছু বাড়ির উপকরণ দেখা গেলেও স্পষ্ট করে শুধুমাত্র চালটা দেখা যাচ্ছে। বাড়ির বেশিরভাগ অংশ ধসে পড়ে মাটি ভেতরে। স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আর্থিক অনুদান দেয়াসহ নানা কাজ করছেন। পুলিশও আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উদ্ধারের এক পর্যায়ে পুলিশও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছেন বলেও জানান ওসি মো. হাফিজুর রহমান।

উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া স্থানীয় ছৈয়দ আলম ও হারুন রশিদ ও আহত গৃহকর্তা ছৈয়দ আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো কাজ শেষ করে ঘটনার দিন রাত ৯ টার দিকে ঘুমাতে যান তারা। বাড়িতে উত্তর দক্ষিণে দুইটা কক্ষ। উত্তরের কক্ষে ছৈয়দ আলম ও তার স্ত্রী রেহেনা বেগম ও দুগ্ধ শিশু মরিয়ম (৮) শুয়ে পড়েন। অপর কক্ষে আব্দু শুক্কুর (১৮), কহিনুর আক্তার (১৪), মো. জোবায়ের (১২), জায়নুফা আক্তার (১১), আব্দুল লতিফ (৭) ঘুমাতে যান।

বিজ্ঞাপন

তার আগে পিতা ও ছেলে আব্দু শুক্কুর পরামর্শ করেন সকালে ঘুম থেকে উঠে তাদের সাড়ে ৪ খানি অর্থাৎ ১৮০ শতক সবজি ক্ষেত পরিচর্যা করা, সার দেয়াসহ নানা কাজ করবে। যেহেতু টানা বর্ষণে সবজি ক্ষেতে পানি জমে থাকাসহ নানা প্রভাব পড়েছে।

পিতার বিপর্যস্ত সকাল আসলেও ছেলে আব্দু শুক্করের সকাল আর আসেনি আসবেও না। তাদের দুজনের মাত্র দুটি স্বপ্ন ছিল সবজি ক্ষেত করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পড়া লেখা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করা। কহিনুর উম্মে সালমা মহিলা মাদরাসায় ৭ম, মো. জোবায়ের ও জায়নুফা পূর্ব পানখালী আজিজিয়া নুরানী মাদরাসার চতুর্থ, ও  ৭ বছরের আব্দুল লতিফ উম্মেল কুরা নুরানী মাদরাসায় শিশু শ্রেণিতে পড়তেন।

 আজিজিয়া মাদরাসার শিক্ষক আহমদ উল্লাহ আরটিভি নিউজকে জানান, চতুর্থ শ্রেণির জোবায়ের ও জায়নুফা শুরু থেকে তার প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে যাচ্ছিলেন। চরিত্রবান ও অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তারা।

ছৈয়দ আলমের কাজের ও মানের হাল ধরা আব্দু শুক্কুর সহ মোট ৫ ছেলে মেয়ে পাহাড় ধসের বলি হন। ঠিক সময়ে উদ্ধার হলেও ছৈয়দ আলমও পঙ্গু হন। কখন সুস্থ হয়ে উঠবেন তাও তিনি জানেন না। তার স্ত্রী দুগ্ধ শিশু কন্যা হাসপাতালে রয়েছেন। পাহাড় ধসে তার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

এ দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিনাল পারভেজ ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাভেজ চৌধুরী ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। সেই সঙ্গে ঘর দেয়ার আশ্বস্ত করেন। একই সঙ্গে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদিও ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন এই পরিবারকে।

জিএম 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission