জাল ভিসায় এয়ারপোর্টে ধরা, দালালের বাড়িতে ৬ যুবক

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ০৭:১৫ পিএম


জাল ভিসায় এয়ারপোর্টে ধরা, দালালের বাড়িতে ৬ যুবক
ছবি : আরটিভি

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তিন গ্রামের ছয়জন যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে জাল ভিসা নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা খেয়ে সেখান থেকে সরাসরি দালালের বাড়িতে এসে গত ছয় দিন ধরে অবস্থান করছেন। আর বিদেশ নয়, দেওয়া টাকা ফেরত নিয়ে তারা নিজ বাড়িতে ফিরতে চান। তা না হলে, দালালের বাড়িতেই সবাই শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মাহুতি করবেন বলে জানান। 

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামে দালালের বাড়িতে গিয়ে ওই ছয় যুবকের অবস্থানের দৃশ্য দেখা যায়। 

দালালের বাড়িতে অবস্থানরত যুবকরা হলেন, উপজেলার পাঁচগ্রামের আতিকুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আব্দুল ওয়াদুদ, আলামিন তালুকদার, মোলামগাড়ীহাটের মেহেদী হাসান, জিন্দারপুর গ্রামের আবু তাহের।

বিজ্ঞাপন

অবস্থানরত যুবক, দালালের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিন্দারপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে দালাল সুলতান মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। এলাকায় তাকে মাবুদ নামে চেনেন। সাড়ে তিন বছর আগে একই এলাকার পাঁচগ্রাম, মোলামগাড়ীহাট ও জিন্দারপুর গ্রায়ের ছয়জন যুবক একসঙ্গে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দালাল মাবুদের সাথে ৩৩ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তির পুরো টাকা তারা পরিশোধও করেছেন। তখন থেকে  কালক্ষেপণ করেন মাবুদ। ছয় মাস আগে মালয়েশিয়া নয়, তাজিকিস্তানে পাঠানোর কথা হয়। তাতেও রাজি হন ওই যুবকরা। অনেক দেরিতে হলেও চলতি বছরের ১৮ মার্চ তাদেরকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাজিকিস্তানের উদ্দেশ্যে ঢাকায়। ২০ মার্চ রাতে একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্য টিকিটসহ কাগজপত্র হাতে পেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে  উপস্থিত হন ওই ছয় যুবক। ‘বিধিরবাম’ এয়ারপোর্টে চেকিংয়ে গিয়ে জানতে পারেন ম্যানপাওয়ার, ভিসা, বিএমইটি স্মার্ট কার্ড জালিয়াতি করে তাদের ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছেন দালাল মাবুদ। শুধুমাত্র বিমানের টিকেট ছিল আসল। এয়ারপোর্ট থেকে তাদেরকে ফেরত আসতে হয়। তাই তারা নিজ বাড়িতে না গিয়ে দালাল সুলতান মাহমুদের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

এখানেই শেষ নয়, গত ছয় মাস আগে একই উপজেলার আতাহার গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম, জিন্দাপুর গ্রামের মোশারফের ছেলে মোহসিন আলী, বেলগড়িয়া গ্রামের ফরিদুলের ছেলে ফয়সাল, মহেশপুর গ্রামের ইউনুসের ছেলে রিমন, পাঁচগ্রামের মৃত মজিদের ছেলে মোস্তফাসহ আরও অনেককেই মালয়েশিয়াতে একই কৌশলে পাঠিয়েছে দালাল মাবুদ। তারা বর্তমানে কাজ না পেয়ে মাবুদের লোকজনদের কাছে বন্দি অবস্থায় মালয়েশিয়া জীবন-যাপন করছেন।  

অবস্থানরত যুবক আতিকুল ইসলাম বলেন, জমি বন্ধক রেখে দালাল মাবুদকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে আজ বড় বিপদে পড়েছি। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ছয় দিন ধরে এ বাড়িতে অবস্থান করছি। পুলিশ নয়, নিজেরাই এর সমাধান চাই। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত এই বাড়ি থেকে যাবো না। কপালে যা আছে তা হবেই।

বিজ্ঞাপন

আরেক যুবক আবু তাহের বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়া হয়নি তাতে কোনো সমস্যা নেই। তাজিকিস্তানে যাওয়ার দিনে কেন ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আমাদেরকে ফাঁসানো হলো। আমরা আর বিদেশে যাবো না, টাকা ফেরত চাই। তিনি আরও বলেন, মাবুদের সাথে সমাধানের জন্য আমরা বসেছিলাম, কিন্তু ৯৯৯ এ ফোন করলে মাবুদকে পুলিশ এসে থানায় নিয়ে যায়। পরে আমরাও থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ মাবুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বলেছিল, আমরা অভিযোগ করিনি। পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর থেকে মাবুদ পলাতক।  

দালাল সুলতান মাহমুদ ওরফে মাবুদ বলেন, আমি যে এজেন্সির মাধ্যমে তাদেরকে পাঠাচ্ছি মূলত তারাই এসব ভুয়া কাগজপত্র প্রস্তুত করেছে। তারা যে ভুয়া কাগজপত্র করেছে তার কিছুই জানি না। টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আমি তাদের নিকটে সময় চেয়েছি। তাদের টাকার ব্যবস্থা করছি। ছয় মাস আগে মালয়েশিয়া যাদেরকে পাঠিয়েছেন তারা এখন বন্দি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ পায়নি, তার হেপাজতেই তারা রয়েছেন। খরচ যা লাগছে তিনিই দিচ্ছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তাদেরও ব্যবস্থা হবে।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, ৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতারিত যুবকদের অভিযোগ দিতে ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে নারাজ। মাবুদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission