সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু শুঁটকি আহরণ মৌসুম
বাগেরহাটের পূর্ব সন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লীতে সোমবার (৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি উৎপাদন মৌসুম। বঙ্গোপসাগর সাগরতীর দুবলার বন বিভাগের বিশেষ টহল ফাঁড়ির অধীন চারটি চরে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে শুঁটকি উৎপাদন।
এ বছর সাড়ে সাত কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হচ্ছে পাঁচ মাসের এই মহা কর্মযজ্ঞ। এর আগে, রোববার (৩ নভেম্বর) থেকে সুন্দরবন বিভাগের অনুমতিপত্র (পাস) নিয়ে জেলে-বহদ্দাররা নৌপথে যাত্রা শুরু করেছেন নির্ধারিত চরে অস্থায়ী শুঁকটি পল্লীর উদ্যেশে।
সুন্দরবন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনে শুঁটকি উৎপাদনকারী চরগুলোতে এবছর জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য ৯৮৫টি ঘর, ৫৭টি ডিপো ও ৯৩টি দোকান ঘর স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে জেলে, বহদার ও দোকানের সংখ্যা। এই মৌসুমে শুঁটকি উৎপাদনের লাইসেন্সধারী ১৭ জন বহদ্দার বা মহাজনের অধীনে দুবলার আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালারা চরসহ চারটি চরে অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি জেলে ও শ্রমিক অবস্থান করবে। তারা পাঁচ মাস ধরে সাগরে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত থাকবে এই চরগুলোতে।
সুন্দরবনের দুবলা ফিশারমেন গ্রুপ ও একাধিক মহাজন সূত্রে জানা গেছে, নানা সংকট ও ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের তীরের দুর্গম এই চরগুলোতে শুঁটকি উৎপাদন করতে হয় জেলেদের। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিরাপদ খাবার পানি সংকট এবং হাজার হাজার জেলের জন্য সরকারিভাবে চিকিৎসাসেবার কোনো ব্যবস্থা না থাকা। ফলে পানিবাহিত নানা রোগ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে প্রতিবছর বহু জেলে ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এছাড়া, সাগরতীরের এই চরগুলোতে পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় প্রতিবছর ঝড়-জলোচ্ছাসেও অনেকের মৃত্যু হয় অনেকের।
সুন্দবনের মাঝের কিল্লার অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীর অন্যতম ব্যবসায়ী চট্টগ্রমের মো. জাহিদ বহদ্দার ও খুলনার ফরিদ আহমেদ জানান, চরগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা খাবার পানি ও চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকা।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, সুন্দরবনের শুঁটকি পল্লীতে আসতে ইতোমধ্যে জেলে মহানজনরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে রোববার মধ্যরাত থেকে তারা চরে যাওয়া শুরু করবে। আলোরকোলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) গত বছর একটি পানির প্লান্ট নির্মিাণ করেছে। তা থেকে যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করা হয় তা জেলেদের তুলনায় খুবই সামান্য। ফলে বালুর চরে কূপ খনন করে তাতে যে পানি জমে তা দিয়েই পিপাসা মেটায় জেলেরা। আর জেলেরা স্বাভাবিক অসুস্থ হলে মৌসুমি ওষুধের দোকানের পল্লী চিকিৎসকই তাদের একমাত্র ভরসা। বড় ধরণের কিছু হলে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়। এভাবে প্রতিবছর বহু জেলের মৃত্যু হয় বিভিন্ন চরে। তাই শুঁটকি মৌসুমে চরগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার পানি সরবরাহ ও অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান এই মৎস্যজীবী নেতা।
সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা বিশেষ টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার মো. খলিলুর রহমান জানা, শুঁটকি খাত থেকে এ মৌসুমে সাড়ে সাত কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে গত বছর আয় হয়েছিল সাত কোটি ২৩ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার থেকেই চরে ঘর তোলা এবং একই সাথে সাগরে মৎস্য আহরণ শুরু করবে জেলেরা। ঘর তোলার যাবতীয় মালামাল জেলে, মহানজন-বহদ্দাররা তাদের নিজ-নিজ এলাকা থেকে নিয়ে আসবেন। বনের কোনো সম্পদ ব্যবহার করতে পারবেন না।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন