সাভারে দুই চলন্ত গাড়িতে ডাকাতি, ৫ যাত্রীকে ছুরিকাঘাত-লক্ষাধিক টাকা লুট
রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় পৃথক স্থানে চলন্ত বাস ও প্রাইভেটকারে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৫ যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে লক্ষাধিক টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতদল।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া-টঙ্গাবাড়ি আঞ্চলিক সড়কের দুর্গাপুর এলাকার ফোর স্পার্ক পোশাক কারখানা সংলগ্ন এলাকায় প্রাইভেটকারে একটি ঘটনা ঘটে। অপর ঘটনাটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি এলাকা থেকে সিঅ্যান্ডবি ও ডেইরি গেইট এলাকার মাঝামাঝি ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাসে ঘটনা ঘটে।
ডাকাত দলের ছুরিকাঘাতে বাস যাত্রীদের মধ্যে শামীম হোসেন গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শামীম আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ঢাকার একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন। তার বাড়ি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার কালিকাপুর গ্রামে।
ভুক্তভোগী বাসের যাত্রী পোশাক শ্রমিক হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি উলাইল স্ট্যান্ড থেকে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসে উঠি। সামনে মহিলাদের আসনে বসা তিন যাত্রীর সঙ্গে বসলে, তারা আমাকে জানালার পাশের সিটে বসতে বলেন। তাদের কথামত জানালার পাশের সিটে বসার কিছুক্ষণ পর ওই তিনজন ধারাল অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারা যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে একজনকে ছুরিকাঘাত করেন। পরে আতঙ্কে বাসের অন্য যাত্রীরা যার কাছে যা ছিল সব তাদের দিয়ে দেয়।
ছুরিকাঘাতে আহত শামীম হোসেনের ভায়রা মিজানুর রহমান বলেন, আমার ভায়রা ভাই ওয়েলকাম বাসে করে আশুলিয়ার শ্রীপুরে যাচ্ছিলেন। যারা টাকাসহ মূল্যবান মালামাল দিতে চায়নি তাদেরকে ছুরিকাঘাত করেছে ডাকাতরা। তখন আমার ভায়রাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকেসহ কয়েক জায়গায় অস্ত্রের আঘাত করে। সব লুট করে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকার ইউটার্নে গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। পরে যাত্রীদের ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে আহতদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. হাসান মাহবুব বলেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত চারজন হাসপাতালে এসেছিল। এর মধ্যে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাকি যারা ছিল তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে বলেও জানান তিনি।
আশুলিয়া থানার সাব ইন্সেপেক্টর (এসআই) অলক কুমার দে বলেন, ঘটনার পর বিশমাইল এলাকায় ছাত্ররা ওই বাসের চালক ও তার সহকারীকে আটক করেছে। ঘটনাটি মূলত সাভার এলাকায়। তাই সাভার থানাকে অবহিত করেছি। তবে ওই বাসে ডাকাতি নয় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি।
এছাড়া, সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া জানান, ডাকাতির ঘটনার একটি ম্যাসেজ পেয়েছেন তিনি। তবে সুনির্দিষ্ট কেউ কোনো অভিযোগ করেন নাই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, আশুলিয়ায় চলন্ত প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে লক্ষাধিক টাকাসহ মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাঠগড়া-টঙ্গাবাড়ি আঞ্চলিক সড়কের দুর্গাপুর এলাকার ফোর স্পার্ক পোশাক কারখানা সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী মো. রেজাউল করিম আশুলিয়া দক্ষিণ গাজীরচটের সিনসিন মোড় এলাকার এন আর এন নিটিং এন্ড গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই মাসুদ রানা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাদী মাসুদ রানার ভাই রেজাউল করিম সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে নিজস্ব প্রাইভেটকার যোগে ঢাকার মিরপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। তিনি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাঠগড়া-টঙ্গাবাড়ি আঞ্চলিক সড়কের দুর্গাপুর এলাকার ফোর স্পার্ক পোশাক কারখানা সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে তিন থেকে ৪ জন গতিরোধ করে। পরে গাড়ির সামনে ও দুই পাশের গ্লাস ভেঙে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় রেজাউল করিমের সঙ্গে থাকা ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা, একটি আইফোন ও একটি রিয়েলমি ফোন লুট করে ডাকাতরা। তারা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
পৃথকভাবে একই স্থানে ডাকাতের কবলে পড়া সাব্বির নামের এক যুবক বলেন, আশুলিয়ার কাঠগড়া-টঙ্গাবাড়ি সড়কের বড়বিছা এলাকায় আমি ডাকাতের কবলে পড়ি। সেখানে এক ডাকাতকে আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। পরে সেই ডাকাত সদস্য তাদের অন্য সদস্যের কাছে একটু এগিয়ে যেতেই আমি মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।
তিনি আরও বলেন, সেখান থেকে প্রায় কিলোমিটার দূরে গিয়ে জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করি। কল আশুলিয়া থানায় ট্রান্সফার করা হলে থানা থেকে আমাকে বলা হয় সেখানে ফোর্স রয়েছে। ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশ নেই জানালে টিম পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়ে দেন। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া আমি পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি দোকানে জানাই- সামনে ডাকাতি হচ্ছে। তারা বলেন- সেখানে প্রায়ই ডাকাতি হয় এটা সবাই জানে।
ডাকাতির বিষয়টি স্বীকার করে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ঘটনাস্থলে আমাদের টিম রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আরটিভি/কেএইচ
মন্তব্য করুন