ছয় দফা দাবিতে সারাদেশে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে ‘রাইজ ইন রেড’ নামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ‘রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দেশ গড়ার হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সাব্বির আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, আজ ‘রাইজ ইন রেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটক লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে সড়কের দুই পাশে বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধন হবে।
সরকার দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দাবি হলো-
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে, শুক্রবার বিকেলে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে মিছিল করেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। আগের দিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বৈঠক হলেও তাতে অসন্তোষ জানান তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর সাতরাস্তা সড়ক অবরোধ করেন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
আরটিভি/এফএ