• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

দ্য গ্রেট সাধন রায়

সৌমিক হাসান

  ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:০৩

বিপ্লবী সাধন রায়ের সাধন-ভজন কতটা সিদ্ধ হয়েছে তার জীবদ্দশায় তা কেবল ইতিহাসই বলে দেবে। বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সহযোগী হিসেবে কৈশোর থেকে চট্টগ্রামে তার সংগ্রামী চেতনার সূচনা ঘটে। কলকাতায় প্রমথেশ বড়ুয়ার সংস্পর্শে এসে সেখানকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন হয়ে ওঠা এবং পঞ্চাশ দশকের শেষের দিকে ঢাকা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসে যোগ দেন। সাধন রায়ের জন্ম চট্টগ্রাম শহরের নালাপাড়ায় ১৯১৪ সালের ৫ নভেম্বর।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্য সেনের নেতৃত্বে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, টেলিফোন অফিস ধ্বংস, পুলিশ লাইন দখল, ব্রিটিশ প্রশাসন অচল করা, ব্রিটিশ সৈন্যদের সম্মুখযুদ্ধে ৭০-৮০ জন সৈন্যকে আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কাকা ক্ষিরোদ চন্দ্র চট্টগ্রামের এমএলএ থাকায় জামিনে ছাড়িয়ে এনে তাকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে বিশ টাকা বেতনে ফিল্ম করপোরেশন অব ইন্ডিয়ায় পরিচালক রণজিৎ সেনের আশা ছবির মাধ্যমে বিপ্লবী সাধন রায়ের ক্যামেরায় প্রথম হাতেখড়ি।

১৯৪০ সালে প্রমথেশ বড়ুয়ার সহকারী ক্যামেরাম্যান হিসেবে শাপমুক্তি ছবিতে কাজে যোগ দেন। তার সাথে ‘শেষ উত্তর’, ‘জবাব’, ‘মায়ের প্রাণ’, ‘উত্তরায়ণ’সহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ছবিতে কাজ করেন।

১৯৪৭ সালে মে মাসে বকুল রায়কে বিয়ে করেন এবং ১৯৪৯ সালের ৭ নভেম্বর প্রথম সন্তান শুক্লা ও ১৯৫২ সালের ১৮ মে ছোট সন্তান কৃষ্ণার জন্ম হয়। প্রমথেশ বড়ুয়ার ইউনিটের বাইরেও সুশীল মজুমদারের ‘রিক্তা’, ‘তটিনীর বিচার’, ‘প্রতিশোধ’, ‘হাসপাতাল’, ঋত্বিক ঘটকের ‘অযান্ত্রিক’ ছবির একক ক্যামেরাম্যান ও কোনোটির সহকারী ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করেন।

১৯৫২ সালে ঢাকায় কো-অপারেটিভ ফিল্ম মেকার্সের সংগঠক সারোয়ারের অনুরোধে ‘আপ্যায়ন’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রের কাজে ঢাকায় এলে কাজ না হওয়ায় কলকাতায় ফিরে যান। ১৯৫৭ সালে পুনরায় ঢাকা এসে লন্ডনের ফটোগ্রাফার ওয়ান্টার ল্যাসালির সহযোগী ফটোগ্রাফার হিসেবে এ.জে. কারদারের ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবির কাজ শুরু করেন। এরপর ‘যে নদী মরু পথে’, ‘তোমার আমার’, ‘বিষকন্যা’, ‘পঁয়সে’, ‘গোধুলীর প্রেম’, ‘সাতরং’, ‘পুনম কি রাত’, ‘নায়িকা’, ‘ইয়ে ভি এক কাহানী’, ‘জলছবি’, ‘রাজা এলো শহরে’, ‘অপরাজেয়’, ‘জিনা ভি মুশকিল’, ‘জংলী ফুল’, ‘পরশমনি’, ‘অপরিচিতা’, ‘আলোর পিপাসা’, ‘অন্তরঙ্গ’সহ বেশকিছু ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত কাজ করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আগরতলায় জহির রায়হানের সাথে যোগাযোগ হয়। বড় মেয়ের বাড়িতে থেকে জহির রায়হানের সাথে ছবি তোলার কাজে লেগে যান। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘রক্তাক্ত বাংলা’র কাজ করেন। তারপর ‘এতিম’, ‘নদের চাঁদ’, ‘কে তুমি’, ‘যন্তর-মন্তর’, ‘দূর থেকে কাছে’, ‘পুরস্কার’, ‘মীমাংসা’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘উজান ভাটি’, ‘বসুন্ধরা’, ‘তরুলতা’, ‘সাহেব’, ‘জীবন এলো ফিরে’, ‘শুভরাত্রি’, ‘আমি কার’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘শুভদা’, ‘রঙিন রূপবান’-এ কাজ করেন।

প্রিয় বন্ধু ফজলে হোসেনের সাথে হোসেন এন্ড রায় নামে যুগ্মভাবে কাজ করেন ‘দি রেইন’, ‘আদালত’, ‘বেদ্বীন’, ‘হাসি’, ‘রাজা বাদশা’, ‘স্মৃতি তুমি বেদনা’, ‘কংকর’, ‘অভিযোগ’, ‘ডার্লিং’, ‘বড় মা’, ‘লাল মেম সাহেব’সহ বেশ কিছু ছবি। পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে ছেলের মতো স্নেহ করতেন বলে সাধন রায়ের মৃত্যুর পর তার ইচ্ছানুযায়ী চাষী নজরুল ইসলাম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদন করেন।

নিজের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বাচসাস, পরিচালক সমিতি, সিকোয়েন্স, হীরালাল সেন স্মৃতি সংসদ পদক ও ১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’ ছবির শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৮৮ সালের ২১ জানুয়ারি সাধন রায় মারা যান। সাধন রায়ের দেহবসান হলেও এ দেশের মানুষ তাকে মনে রাখবে বহুকাল, শতাব্দীর পর শতাব্দী।

(লেখক: শিক্ষক ও চলচ্চিত্র গবেষক)

এম/পি

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আলুর কেজি ৪২০ টাকা!
সাড়ে ১৮ ঘণ্টা নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত আসতে লাগবে ৩০ মিনিট
ফেসবুক লাইভে বাঁচার আকুতি, কিছুক্ষণ পর গাছের ডালে যুবকের মরদেহ
আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস