দয়াল ডাক দিয়েছিলেন, তিনিও ‘জীবনের গল্পে’ ইতি টেনে সাড়া দিতে কার্পণ্য করেননি। বলছি প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের কথা। যিনি ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র মতো কথা না রেখে আমাদেরকে একা করে চলে যান ২০২০ সালে। তবে তিনি চলে গেলেও আজও রয়ে গেছে তার গান, ঘুরে-ফিরছে মানুষের মুখে-মুখে।
গানই জীবন ছিলো এই কিংবদন্তির কাছে। সে কারণেই হয়তো জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন চলচ্চিত্রের গান করেই। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা কী জানেন, যেসব শিল্পী তার গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন, হয়েছেন ‘তারকা’, তাদের বেশিরভাগই খোঁজ রাখেননি ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না’ গানের শিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে। এমনকি তার শেষ দিনগুলোতেও না।
এমন কি হওয়ার কথা ছিল? দায়বদ্ধতা বলে কি তবে কিছুই নেই? একটা মানুষ নিজের স্বর্ণালী সময়টুকু দিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিকে, অন্তত দুই দশক মানুষকে করে রেখেছিলেন মোহবিষ্ট। গানে গানে বলে গেছেন সুখ-দুঃখের কথা। অথচ সেই মানুষটিই চলে গেলো ‘বুকের মধ্যিখানে’ কষ্ট নিয়ে! আর যাওয়ার সময় যেন অসহায় কণ্ঠে বলে গেলো নিজেরই গান, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, ও ও ও/এই চোখ দুটো মাটি খেয়ো না’।
জানি না তার চোখ দুটো মাটি খেয়েছে কিনা, যদি না খেয়ে থাকে, তবে তিনি নিশ্চয় আজও হাসি-আনন্দ ও প্রেম-বিরহ মাখা স্বরলিপি খুঁজছেন, চাইছেন কণ্ঠে তুলে মুগ্ধতা ছড়াতে! কি ভুল বললাম?
আবার এমনটা নাও হতে পারে। কারণ, যে অনাদরে তিনি চলে গেছেন, হয়তো ভাবছেন, কী লাভ আর গান করে! ভালোবেসেই তো গেলাম শুধু, কিন্তু ভালোবাসা পেলাম না। এর চেয়ে বরং এখানে নির্জনে থাকি। নির্ভৃতেই থাকি।
এই দুইয়ের একটাও না হয়ে আবার ধরুন এমন হলো, তিনি সব অভিমান হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশিতে ভরে গাইতে শুরু করলেন, ‘তুমি যেখানে/ আমি সেখানে’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’, ‘তুমি আমার জীবন/ আমি তোমার জীবন’, ‘তুমি আমার কত চেনা’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’-এর মতো গান। তবে কেমন হবে?
‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’ কিংবা ‘ভালো আছি ভালো থেকো’র মতো গানের আবহে না ফিরে এন্ড্রু দা প্লিজ আপনি ‘তোমায় একজনমে ভালোবেসে/ভরবে না মন ভরবে না’ আবহে ফিরুন। আমরা আপনার ‘তথাকথিত’ ভক্ত-অনুরাগী নই। আমরা হলাম তারা, যারা ব্যক্তি এন্ড্রু কিশোরকে ভালোবাসে। ভালোবাসে তার গানকেও। যদি এই ধরণীতে আপনাকে সবাই ঘৃণা করে কিংবা ভুলেও যায়, তবুও আমরা আপনাকে নিয়ে ‘ভালোবাসার নাওয়ে দেশান্তর’ হওয়ার প্রয়াস অব্যাহত রাখবো।
প্রমিস...
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও গীতিকার