ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে দিয়ে সপ্তাহ দুয়েক ধরে টানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসকে শায়েস্তা করার নামে সম্প্রতি স্থল ও আকাশপথে হামলার তীব্রতাও বাড়িয়ে দিয়েছে দখলদার রাষ্ট্রটির সেনারা। হামলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড় হচ্ছে গাজার নিরপরাধ বেসামরিক বাসিন্দাদের মৃত্যুর মিছিলও। এর মাঝেই মার্কিন মদদপুষ্ট দখলদার রাষ্ট্রটি আবার হামলা শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ লেবাননেও।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে চার মাস আগে যুদ্ধবিরতির পর দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন এ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭ জন। অপরদিকে শনিবার (২২ মার্চ) সকাল থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। এর মধ্যে পাঁচজনই শিশু। খবর আল জাজিরার।
এদিকে ইয়েমেনি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। হোদেইদা বিমানবন্দরে তিনটি এবং লোহিত সাগরের আল সালিফ বন্দরে হামলা চালানো হয়েছে।
এর আগে, লেবানন থেকে ইসরায়েলে দফায় দফায় রকেট হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলের সীমান্তে নিক্ষেপ করা তিনটি রকেট প্রতিহত করেছে।
ইসরায়েলের আর্মি রেডিও এক খবরে জানিয়েছে, লেবানন থেকে নিক্ষেপ করা কমপক্ষে পাঁচটি রকেট শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি রকেট প্রতিহত করা হয়েছে এবং দুটি লেবাননের ভূখণ্ডের ভেতরে পড়েছে বলে জানানো হয়।
এছাড়া হুথি বিদ্রোহীরাও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার (২১ মার্চ) রাতে তারা ইয়েমেন থেকে আসা একটি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হানার আগেই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়।
২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় হামলা চালিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ এবং হুথি বিদ্রোহীরা। ফিলিস্তিনিদের ওপর যতদিন পর্যন্ত আগ্রাসন চলবে ততদিন এই হামলা চলবে বলে জানিয়েছে সংগঠন দুটি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৯ হাজার ৭৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ জন আহত হয়েছেন।
টানা ১৫ মাস আগ্রাসনের পর মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এ চুক্তির আওতায় ৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রাথমিক এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাতারের দোহায় বিবদমান পক্ষের সঙ্গে কাতার ও মিসরের আলোচনা চলছিল। কিন্তু, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সেই আলোচনা ভেস্তে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি মিডিয়া অনুসারে, গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ায় ২০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
আরটিভি/এসএইচএম