মেক্সিকো-কানাডা ও চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ করে ও চীনের পণ্যে বর্তমান হারের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা ঘোষণা দেওয়া হেয়ছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাবে এই আদেশে স্বাক্ষর করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে নতুন এ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ওই তিন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করায় অ্যাভোকাডোস থেকে স্নিকার, গাড়িসহ অনেক পণ্যের দাম বাড়বে।
এর আগে কানাডা-মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরেই শুল্কবিহীন বাণিজ্য হচ্ছে। কিন্তু সেই নীতি থেকে সরে এলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অপরদিকে চীনের সঙ্গে গত দুটি সরকারেরই বাণিজ্যিক যুদ্ধ অব্যাহত ছিল।
ট্রাম্প গত নভেম্বরে নির্বাচিত হওয়ার পরই জানিয়েছিলেন মেক্সিকোর সব পণ্যের ও কানাডার বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। অপরদিকে চীনা পণ্যের ওপর আরোপ করা হবে ১০ শতাংশ শুল্ক।
ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কথিত ‘ডি মিনিমিস’ নামের একটি লুপহোল বন্ধ হয়ে যাবে। এটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ৮০০ ডলার বা তার চেয়ে কম দামের কোনো পণ্য আমদানি করলে কোনো ধরনের শুল্ক দিতে হতো না। এটির সুবিধা গ্রহণ করত যুক্তরাষ্ট্রের ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চীনা কোম্পানি শিন এবং থেমুর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এটি ব্যবহার করত।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ফেনটানেল এবং কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের আসা ঠেকাতে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে এটির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে এ দেশগুলো। এতে করে এই তিন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা না নিতে পারে, সেজন্য এই নির্বাহী আদেশে একটি ধারা রেখেছেন ট্রাম্প। এতে উল্লেখ আছে, যারা মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে তাদের ওপর শুল্কের পরিধি বৃদ্ধি করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ নির্দেশে নতুন এক বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি তৈরি হওয়া এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দাভাব ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের অন্যতম চীন, কানাডা ও মেক্সিকো। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ৪০ শতাংশ গেছে এ তিন দেশ থেকে।
ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদেরা।
এদিকে, এএফপির খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের পদক্ষেপে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া চীনের তরফেও একই ধরনের ঘোষণা এসেছে।
জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ১৫৫ বিলিয়ন (১৫ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে তার সরকার। মঙ্গলবার থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর এ শুল্ক কার্যকর হবে। বাকি শুল্ক আরোপ কার্যকর হবে ২১ দিনের মধ্যে।
এ ছাড়া ক্লদিয়া শেনবাউম গতকালই ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেবে তার সরকার। অন্যদিকে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনুরূপ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
আরটিভি/এআর