দীর্ঘদিন ফ্রিজ ভালো রাখার কয়েকটি সহজ উপায়
আধুনিক জীবনে ফ্রিজ আমাদের সবার নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি জিনিস। কম-বেশি আমাদের সবার বাড়িতেই ফ্রিজ রয়েছে। ফ্রিজ ব্যবহারে যেমন সুবিধা রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু অসুবিধাও। দেখা যায়, অনেকের ফ্রিজে কয়েক দিন পর পরই বরফের আস্তরণ পড়ে যায়। সেটা নরমালেই হোক বা ডিপ। বরফের জন্য সহজে কিছু বের করাও যায় না। আবার রাখাও যায় না। অনেক সময় নরমালে রাখা খাবারও বরফ হয়ে যায়। বারবার পরিষ্কার করে তাপমাত্রা কমিয়ে বাড়িয়েও লাভ হয় না। সেক্ষেত্রে কি করবেন তা অনেকেই ভেবে পান না, ফলে বাড়ে দুশ্চিন্তা। তবে কিছু উপায় জানলে সহজেই এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
জেনে নিন রেফ্রিজারেটরের কার্যকরিতা বৃদ্ধি পেতে করবেন যে কাজগুলো—
অকারণে দরজা খোলা থেকে বিরত থাকুন: ফ্রিজের দরজা যত কম খুলবেন, ততই ফ্রিজের ভেতরকার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভালো থাকবে। কিছু রাখার জন্য বার বার ফ্রিজ না খুলে একসাথে গুছিয়ে সব একসাথে রাখুন বা বের করুন।
ফ্রিজের নরমাল তাপমাত্রা: আদর্শ তাপমাত্রা হবে ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১.৬ ডিগ্রি থেকে ৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় খাবার ঠান্ডা থাকবে কিন্তু বরফ থাকবে না। এবং গভীর বরফের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হবে ০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা মাইনাস ১৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।
পিছনের দেওয়ালে জিনিসপত্র ঠেসে দেবেন না: রেফ্রিজেরেটরের পেছনের দেয়ালে কোন কিছু ঠেসে রাখা থেকে বিরত থাকুন। এটি ফ্রিজের শীতল চক্রের ক্ষতি করে ফলে ফ্রিজকে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়। তাছাড়া আপনার রাখা সবজি বা মাছ মাংসের জন্যই এটি ভালো নয়।
সরাসরি গরম খাবার ফ্রিজে রাখবেন না: সরাসরি গরম খাবার ফ্রিজে রাখা মোটেও উচিত নয়। কারণ, সে খাবার ঠান্ডা করতে ফ্রিজকে খুব বেশি শক্তি অপচয় হয়। এছাড়াও সরাসরি গরম খাবার থেকে আপনার ফ্রিজে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে।
খাবার ঠান্ডা হতে পরিমিত সময় দিন: খুব তাড়াতাড়ি খাবার বা মাছ, মাংস ঠান্ডা করার জন্য যদি আপনি ফ্রিজের ঠান্ডা হবার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন, তবে বোকামি করবেন। এতে ফ্রিজের খুব বেশি শক্তি খরচ করতে হয় যা থেকে আপনার ফ্রিজ নষ্টও হয়ে যেতে পারে। এর চেয়ে বরং জিনিস ঠান্ডা করার জন্য ফ্রিজকে পরিমিত সময় দিন।
কুলিং কয়েল পরিষ্কার রাখুন: ফ্রিজের পেছন দিকে যে কুলিং কয়েল থাকে সেখান থেকেই ফ্রিজে শক্তি পৌঁছায়। সেই কুলিং কয়েলে প্রচুর ধুলো জমলে শক্তির প্রবাহ কমে যায় আর তখন ফ্রিজের শক্তি বেশি ব্যয় হয়। তাই এই কুলিং কয়েল পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। তবে একটু সাবধানে করবেন যেন কুলিং কয়েলের বক্ররেখাগুলোর কোন ক্ষতি না হয়। তাহলে সেগুলো কর্মদক্ষতা কমে যাবে।
জমে থাকা অতিরিক্ত বরফ অপসারণ করুন: অনেকে ভাবেন, ফ্রিজে যত বরফ থাকবে ততই ভালো। এই ধারণা কিন্তু একদম ভুল। অতিরিক্ত বরফ জমা হলে রেফ্রিজেরেটরের ঠান্ডা করার কর্মদক্ষতা কমে যায়। তাই ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমা হলে যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো অপসারণ করুন।
এনার্জি বাল্ব সংযুক্ত করুন: ফ্রিজে একটি এনার্জি বাল্ব সংযুক্ত করুন। এটি ফ্রিজে থাকা বাল্ব থেকে বেশি তাপ উৎপন্ন করবে যার ফলে আপনার রেফ্রিজেরেটরের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে লেড লাইট বেশ ভালো কাজ করে।
চুলা বা ওয়াটার হিটার থেকে ফ্রিজ দূরে রাখুন: ফ্রিজকে অবশ্যই এমন কিছু থেকে দূরে রাখুন যা তাপ উৎপন্ন করে। বিশেষ করে চুলা, স্টোভ, ওয়াটার হিটার এসব থেকে দূরে রাখুন।
ফ্রিজকে বাতাসের সংস্পর্শে রাখুন: বন্ধ ঘরে ফ্রিজ না রেখে যেখানে বাতাসের ঠিকমত প্রবাহ হয় তেমন জায়গায় ফ্রিজ রাখুন। ফ্রিজের পেছন দিক দিয়ে যে গরম বাতাস বের হয় তা সাধারণ বাতাসের সাথে মিশে বাতাস অদল বদল করে। আপনি যদি, এমন জায়গায় ফ্রিজ রাখেন যেখানে ফ্রিজের আশেপাশে ঠিকমত বাতাস পৌঁছোও না, তবে ফ্রিজকে খুব বেশি শক্তি অপচয় করতে হবে আর খুব দ্রুতই আপনার রেফ্রিজেরেটর নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত: সাধারণত আপনি একটি ফ্রিজের শক্তি ৫ থেকে ৮ এর মধ্যে সেট করবেন। এই শক্তি আপনার ফ্রিজটিকে সেরা পরিষেবা দেবে। ৩ থেকে ৫ শক্তির মধ্যে একটি রেফ্রিজারেটর আপনার গভীর অংশ এবং স্বাভাবিক অংশকে সঠিকভাবে পরিবেশন করবে। কিন্তু সবসময় ৩.৫ পাওয়ার কাছাকাছি রেগুলেটর রাখার চেষ্টা করা উচিত। ফলস্বরূপ, আপনাকে অতিরিক্ত তুষার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আবার, আপনাকে পানি জমে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না।
প্রি-চিলিং ফুড: ফ্রিজে রাখার আগে যেকোনো খাবার ঘরের তাপমাত্রায় আনুন। ফ্রিজে গরম খাবার রাখলে স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা হতে বেশি সময় লাগবে। ততক্ষণে খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার, গরম খাবার রেফ্রিজারেটরের ভিতরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে অন্যান্য খাবার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
দরজা চেক করুন: ফ্রিজ যথেষ্ট ঠান্ডা হলে, দরজা ‘রাবার সিল’ বা ‘গ্যাসকেট’ পরীক্ষা করুন। এতে ‘লিক’ থাকলে ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ফলে খাবার নষ্ট হবে, বিদ্যুৎ বিলও বাড়বে।
মন্তব্য করুন