পূজার আগেই তরতাজা রাখবে উপকারী যে পানীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ০২:৪৭ পিএম


পূজার আগেই তরতাজা রাখবে উপকারী যে পানীয়
ছবি: সংগৃহীত

উৎসব বা আয়োজনে অন্য সব দিনের থেকে স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি ভূরিভোজ করা হয়। আর কিছুদিন বাদেইতো শুরু হবে দুর্গোপূজা, তখনতো ভূরিভোজ হবে বাধাহীনভাবে। তাইতো তার আগেই শরীরকে টক্সিন মুক্ত করতে হবে। তা না হলেতো পূজায় ভূরিভোজ করতে গিয়ে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা বিপত্তি। তাই এখন থেকেই যদি সুস্থ ও তরতাজা থাকতে হয়, তা হলে শরীর ‘ডিটক্স’ করা খুব জরুরি।

বিজ্ঞাপন

ডিটক্স করা ঠিক কাকে বলে:

এই বিষয়ে পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, ডিটক্স মানে হলো ‘ডিটক্সিফিকেশন’। আসলে পরিবেশ, খাবার ইত্যাদি থেকে প্রতি দিনই কিছু বিষাক্ত পদার্থ আমাদের শরীরে ঢোকে। অ্যালকোহল বা বিভিন্ন রকম ওষুধের উপাদানও এই বিষ প্রবেশের কারণ হতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য এই সব টক্সিন বা বিষ শরীর থেকে বের করা প্রয়োজন। তা না হলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন ভেঙে পড়বে, তেমনই বিভিন্ন রোগজীবাণুও বাসা বাঁধবে শরীরে। পুষ্টিবিদের কথায়, শুধু পানি পান করে এই সব দূষিত পদার্থ শরীর থেকে পুরোপুরি বের করে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই জরুরি ‘ডিটক্স’ পানীয়।

বিজ্ঞাপন

যে কারণে খাবেন এই পানীয়:

বিভিন্ন রকম মৌসুমি ফল, সবজি, মশলাপাতি পানিতে ভিজিয়ে রাখলে, তাতে থাকা ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি পুষ্টিকর উপাদান পানিতে মিশে যায়। তখন সেই পানিকেই বলা হয় ‘ডিটক্স ওয়াটার’। অনেকেই ভাবেন, শুধু ফলের টুকরো বা সবজি কুচি করে ডিটক্স পানি তৈরি হয়, তা কিন্তু নয়। গ্রিন টি, ঈষদুষ্ণ লেবু- পানি, জিরার পানি, সারা রাত ভিজানো আদা পানি, শসা এবং লেবু পানি, এই সবও কিন্তু ডিটক্স পানীয়। অনেকেই সারারাত মৌরী-মেথি ভিজিয়ে রেখে, সকালে তা ছেঁকে পান করেন। এটিও এক প্রকার ডিটক্স পানীয়।

পুষ্টিবিদদের কথায়, আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই, তার পুরোপুরি হজম হয় না। পরিপাক না হওয়া খাবারও দূষিত পদার্থের মতোই জমা হতে থাকে শরীরে। এই দূষিত পদার্থ বের না করে দিলে তখন তা থেকে হার্টের রোগ, পাকস্থলী ও কিডনির অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণেই ডিটক্স পানীয় খেতে বলা হয়, যা শরীরকে বিশুদ্ধ করে। ডিটক্স পানীয়র আরও উপকারিতা আছে। যেমন ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়াতেও এই পানীয়গুলো সাহায্য করে। সহজ করে বললে, শরীরের প্রতিটি কোষকে সুস্থ রাখাই এর কাজ।

বিজ্ঞাপন

তবে, ইন্টারনেট থেকে বা বাজারচলতি কিছু ডিটক্স পানীয় কিনে পান করলে কিন্তু লাভ হবে না। কারণ, সকলের শরীরে সব রকম পানীয় কার্যকরী না-ও হতে পারে। তাই কী ধরনের পানীয় পান করবেন, কারা পান কর্যান ও কারা নয়, তা জেনে রাখা খুব জরুরি।

কোন ‘ডিটক্স’ কার জন্য:

১) সবচেয়ে পরিচিত ডিটক্স পানীয় হলো ঈষদুষ্ণ পানিতে লেবুর রস। পুষ্টিবিদের পরামর্শ, গ্যাসের সমস্যা থাকলে অথবা আলসার থাকলে, এই পানীয় পান করা যাবে না। যাদের শরীরে বেশি পটাশিয়াম সহ্য হয় না, তাদের জন্যও এই পানীয় বারণ।

২) তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে চাইলে পানিতে শসার টুকরো ও বিভিন্ন রকম লেবু, যেমন কমলালেবু, বাতাবি লেবু বা মুসাম্বির টুকরো মিশিয়ে সেই পানি পান করতে পারেন। বিভিন্ন রকম বেরি জাতীয় ফল, যেমন স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ক্র্যানবেরিও মেশানো যায় পানিতে। সেই ডিটক্স পানি শরীর তরতাজা তো রাখেই, সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

৩) পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, মশলার মধ্যে আদা, দারচিনি, আস্ত হলুদ, লবঙ্গ ইত্যাদি ভিজিয়েও ডিটক্স পানীয় তৈরি করা যায়। এই পানীয়ে এত বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, যা অকালবার্ধক্য রোধ করতে পারে।

৫) গ্যাসের সমস্যা বেশি থাকলে অথবা অল্প খেলেই গলা-বুক জ্বালা করে যাদের, তারা যদি পূজার সময়ে ভালোমন্দ খেতে চান, তা হলে আগে থেকেই ডিটক্স পানীয় পান করা শুরু করে দিন। সে ক্ষেত্রে মৌরি-মেথি ভেজানো পানি খুবই কার্যকরী হতে পারে। টানা ১০-১২ দিন পান করে দেখুন, অনেক সুস্থ থাকবেন। কোনও অ্যান্টাসিড খেতে হবে না।

৬) ডায়াবিটিস, হার্টের রোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে, পানিতে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন। দারচিনির গুঁড়ো সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে সেই পানীয় পান করতে হবে। দারচিনির টুকরোও ভিজিয়ে রাখতে পারেন, তবে তা খুব ভালো মানের হতে হবে।

৭) কিডনির সমস্যা থাকলে বা ঘন ঘন মূত্রনালির সংক্রমণ হলে, ক্র্যানবেরি ভেজানো পানি পান করতে পারেন। তাতে খুবই উপকার হবে।

৮) ঋতুস্রাব অনিয়মিত হলে বা ঋতুকালীন সময়ে প্রচণ্ড ব্যথাবেদনা ভোগালে, কাঁচা হলুদ, তুলসী ভেজানো পানি পান করলে উপকার পাবেন। কাঁচা পেঁপে ভেজানো পানিও পান করতে পারেন। কাঁচা পেঁপে ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করতে পারে।

৯) স্থূলত্ব থাকলে আনারসের টুকরো ভেজানো পানি পান করতে পারেন। খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমবে।

১০) ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চাইলে পালং শাক, টমেটো, শসা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। তবে শাক জাতীয় কিছু পানিতে ভেজানোর আগে তা লবণ-গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

ডিটক্স পানীয় কখন খাবেন:

সকালে খালি পেটেই যে ডিটক্স পানীয় পান করতে হবে, তা নয়। দু'টি আহারের মাঝে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। প্রাতরাশের ২ ঘণ্টা পরে ডিটক্স পানীয় পান করতে পারেন, আবার দুপুরের খাওয়ার এক ঘণ্টা আগেও পান করতে পারেন।

আরটিভি/এফআই

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission