যে কারণে হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১১:০১ এএম


যে কারণে হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যায়

অনেক কারণে হার্টের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হতে পারে, যা কার্ডিওমেগালি নামে পরিচিত। ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি (ডিসিএম) হার্টের (হৃৎপিণ্ড) মাংসপেশির রোগ। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের দেয়াল পাতলা হয়ে যায় ও এর বাঁ দিকের চেম্বার অস্বাভাবিক রকম বড় আকার ধারণ করে বা ফুলে যায়। ফলে হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়। হৃদপিণ্ড এর নিজস্ব গতিতে পাম্প করতে না পারায় রোগীর শরীরে, বিশেষ করে পায়ে পানি আসে ও অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়।

কার্ডিওমেগালি বা হার্ট বড় হয়ে যাওয়া মোটেই কাজের কথা নয়। এতে বহু ধরনের শারীরিক অসুখবিসুখ হতে পারে। সাধারণত অন্য কিছু অসুখের কারণে, যেমন উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্টের আকার বড় হয়ে যায়। তখন আর হার্ট আগের মতো কাজ করতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

উপসর্গ: কোনো উপসর্গ না থাকায় রোগী বুঝতে পারেন না যে তার হৃৎপিণ্ডে ডিসিএম আছে। চিকিৎসা না হলে আক্রান্ত ব্যক্তি হৃৎপিণ্ড অকার্যকর হওয়া থেকে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারেন। উপসর্গগুলোর মধ্যে শুরুর দিকে অতিমাত্রায় দুর্বলতা, স্বাভাবিক কাজকর্মে শ্বাসকষ্ট, পায়ের পাতায় ও গোড়ালিতে পানি আসে এবং বুকব্যথা ও বুক ধড়ফড় করতে থাকে। পরিবারে কারও এ রোগ হলে বাকি সবার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উত্তম।

কারণ: ডিসিএমের কারণ হিসেবে কিছু সুনির্দিষ্ট সংক্রমণ, প্রেগন্যান্সির শেষের দিকের জটিলতা, ডায়াবেটিস, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে আয়রন জমা হওয়া (হিমাক্রমাটোসিস), উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, হৃৎপিণ্ডের আ্যরিদমিয়া ও ভালভ ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়াকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া অতিমাত্রায় মদ্যপান, সিসা, কোবাল্ট, পারদজাতীয় টক্সিনের সংস্পর্শে আসা, ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে এ রোগ হতে পারে।

যাদের ঝুঁকি বেশি

  • রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ বা এর থেকে বেশি থাকে
  • পরিবারের নিকটাত্মীয়ের, যেমন ভাইবোন, যদি কার্ডিওমেগালির ইতিহাস থাকে
  • করোনারি আর্টারি ডিজিজ
  • জন্মগতভাবে ক্ষতিগস্ত হার্ট
  • হার্ট ভাল্বের অসুখ
  • হার্টঅ্যাটাকের ইতিহাস
  • মাড়ির প্রদাহ বা জিনজিভাইটিসে আক্রান্ত রোগীর যদি হার্ট ভাল্বের ত্রুটি থাকে।
  • ডায়রিয়া ও বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে আক্রান্ত অল্প বয়সী শিশু-কিশোর।

ডিসিএমে যা হয়: ডিসিএমের কারণে হৃৎপিণ্ডের চেম্বার, বিশেষ করে বাঁ দিকের ভেন্ট্রিকল বড় হয়ে যাওয়ায় ভালভ বন্ধ হওয়ার অ্যালাইনমেন্ট বদলে যায়। ফলে রক্তপ্রবাহের কিছু অংশ ব্যাক ফ্লো করে ও হৃৎপিণ্ডকে আরও বড় হতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড বড় হতে হতে একসময় পাম্প করতে ব্যর্থ হয়ে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়ায় এটি তার পাম্প করার ছন্দ হারিয়ে ফেলে এবং এর ফলে অনিয়মিত হার্টবিট তথা অ্যারিদমিয়া দেখা দেয়।

চিকিৎসা

পুরোপুরি সুস্থতা ফিরে পাওয়া কঠিন। কিছু ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এ ওষুধগুলোর মধ্যে আছে ডাই-ইউরেটিক, এনজিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম ইনহেবিটর, এনজিওটেনসিন রিসিপ্টর ব্লকার, বিটা ব্লকার, ডিজক্সিন, অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট, অ্যান্টি অ্যারিথমিক ইত্যাদি।

সার্জিক্যাল পদ্ধতিতেও কিছু চিকিৎসা করতে হয়। হৃত্স্পন্দন কম থাকলে বা হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে গেলে কখনো কখনো পেসমেকার বসাতে হয়। আইসিডি নামের ছোট একটি ডিভাইসও বসানো লাগতে পারে। হার্ট ভাল্বের সার্জারিও অনেক সময় লাগে। করোনারি রক্তনালির অসুখ হলে বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন হয় অনেক সময়।

কিছু নিয়মকানুন মানলে কার্ডিওমেগালিসহ হার্টের অসুখ থেকে ভালো থাকা যায়।

  • ধূমপান না করা
  • অতিরিক্ত ওজন কমানো
  • পাতে অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন পরিহার করা
  • অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানো
  • মাড়ির অসুখের যথাসময়ে চিকিৎসা
  • রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার বেশি গ্রহণ
  • নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে না করা
  • বাতজ্বর থাকলে তার চিকিৎসা।

সূত্র : অনলাইন

আরটিভি/এফআই

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission | powered by TechnoNext Software Limited.